তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে ৮ জনই প্রযুক্তি খাতের। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ২৫ ধনীর মোট সম্পদের মূল্য প্রায় আড়াই লাখ কোটি বা ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা তালিকায় থাকা ৪০০ ধনীর মোট সম্পদের প্রায় অর্ধেক। শুধু তাই নয়, শীর্ষ ২৫ ধনীর প্রত্যেকেরই সম্পদ গত বছরের তুলনায় এ বছর গড়ে ৩১ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ তালিকায় প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা
ফোর্বস-এর তালিকার প্রথমেই আছেন এক্স, টেসলা, স্পেসএক্সসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের মালিক ইলন মাস্ক। ৫৩ বছর বয়সী ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর তাই ফোর্বস ইলন মাস্ককে টেকনোকিং বা প্রযুক্তি-রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সম্প্রতি টেসলার বাজার কিছুটা পড়ে যাওয়ার কারণে শেয়ারের দাম ১৪ শতাংশ কমে যাওয়ায় প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খুইয়েছেন ইলন মাস্ক। তারপরও ফোর্বসের তালিকায় অন্যদের তুলনায় সম্পদের দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
১৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। ৬০ বছর বয়সী জেফ বেজোস অ্যামাজন ছাড়াও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান লেভিয়াথানের ৯ শতাংশের মালিক। লেভিয়াথানের শেয়ারের দাম ২৯ শতাংশ বাড়ায় জেফের সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে। জেফ বেজোস বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মহাকাশ পর্যটন নিয়ে কাজ করছেন।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ৪০ বছর বয়সী এই ধনীর সম্পদের পরিমাণ ১৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত এক বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাকারবার্গের সব প্রতিষ্ঠানের আয়ের পরিমাণ প্রতি ৩ মাস পরপর ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন আছেন চতুর্থ অবস্থানে। শীর্ষ ধনীর তালিকায় সবচেয়ে বেশি বয়সী তিনি। ৮০ বছরের ল্যারির মোট সম্পদের মূল্য ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওরাকলের ৪০ ভাগ শেয়ারের মালিক ল্যারি। এ বছর ওরাকলের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। আর তাই ল্যারিরও সম্পদ বেড়েছে। তালিকার ষষ্ঠ অবস্থানে আছেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ৫১ বছর বয়সী ল্যারি পেজ। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সপ্তম অবস্থানে আছেন গুগলেরই আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন। ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদের মালিক ৫১ বছর বয়সী সের্গেই। গত জুলাই মাসে গুগলের শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছিল। শেয়ারের দাম বাড়ার কারণে সের্গেই ও ল্যারির সম্পদ বেড়েছে।
শীর্ষ ধনীর তালিকার অষ্টম অবস্থানে আছেন মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ বলমার। ৬৮ বছর বয়সী স্টিভের সম্পদের পরিমাণ ১২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৪ বছর মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করার পর ২০১৪ সালে অবসরে যান তিনি।
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস আছেন তালিকার নবম অবস্থানে। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৬৮ বছর বয়সী বিল গেটস মাইক্রোসফটের দায়িত্ব ছাড়লেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), চিকিৎসাসহ বিভিন্ন গবেষণা বিষয়ে কাজ করছেন।
তালিকায় ১১তম স্থানে আছেন হাল আমলের আলোচিত প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব জেনসেন হুয়াং। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের আলোচিত মুখ হুয়াংয়ের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি প্রসেসর নির্মাতা এনভিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা। এনভিডিয়ার শেয়ার গত বছরের তুলনায় ১৬২ শতাংশ বাড়ায় তাঁর সম্পদ গত বছরের তুলনায় ৬৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়েছে। ১৯৯৩ সালে তিনি এনভিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির জন্য এনভিডিয়ার তৈরি প্রসেসরের চাহিদা বেড়েছে।
ডেল টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা ৫৯ বছর বয়সী মাইকেল ডেল রয়েছেন তালিকার ১২তম স্থানে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বছর ডেল টেকনোলজিসের শেয়ারের দাম বাড়ায় তাঁর সম্পদ গত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
কনিষ্ঠ ধনী যাঁরা
ফোর্বসের ৪০০ জনের তালিকায় ২৬ জন আছেন, যাঁদের বয়স ৫০ বছরের কম। দুজনের বয়স ৩০–এর ঘরে। ১০ জন ধনীর গড় বয়স ৪২ বছর বা তার কম। শীর্ষ ১০ কনিষ্ঠ ধনীর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ তালিকায় বেশ কয়েকজন আছেন প্রযুক্তি খাতের।
কনিষ্ঠ ধনীদের তালিকায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছেন ফেসবুকের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ও ডাস্টিন মস্কোভিৎজ। ৪০ বছর বয়সী মার্ককে সারা পৃথিবী চিনলেও প্রযুক্তি খাতে কিছুটা অপরিচিত ৪০ বছর বয়সী ডাস্টিন। জাকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ ১৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর ডাস্টিনের ১৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মেটাতে ডাস্টিন মস্কোভিৎজের অংশীদারত্ব আছে। এ ছাড়া আসানা নামের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তাঁর।
তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন এয়ারবিএনবির সহপ্রতিষ্ঠাতা ৪১ বছর বয়সী নাথান ব্লেচারজিক। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ কয়েন বেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান আর্মস্ট্রং আছেন তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। ৪১ বছর বয়সী ব্রায়ান আর্মস্ট্রংয়ের মোট সম্পদের পরিমাণ ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কয়েন বেজের শেয়ার গত বছরের চেয়ে ১২৩ শতাংশ বাড়ায় এ বছর সম্পদ বেড়েছে ব্রায়ান আর্মস্ট্রংয়ের।
তালিকার ১০ নম্বরে আছেন ই–কমার্স উদ্যোক্তা আর্নেস্ট গার্সিয়া। ৪২ বছর বয়স্ক আর্নেস্টের মোট সম্পদের মূল্য ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর্নেস্ট গার্সিয়া ২০১২ সালে ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম কারভানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাবার সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে আর্নেস্ট গাড়ি কেনাবেচার ই–কমার্স চালু করেন। ২০১৭ সালে শেয়ারবাজার থেকে কারভানা ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছিল।
প্রথমবারের মতো তালিকায় যাঁরা
তালিকায় ৪০০ জনের মধ্যে নতুন সদস্য হিসেবে ২ জন প্রযুক্তি উদ্যোক্তার নাম রয়েছে। ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ নিয়ে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন আলেকজান্ডার কার্প। তিনি ডেটা মাইনিং প্রতিষ্ঠান প্যালান্টির টেকনোলজিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী কর্মকর্তা। গত ১২ মাসে তাঁর প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭০ শতাংশ।
এনভিডিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম ব্যক্তিগত শেয়ারের মালিক ৬৬ বছর বয়সী টেঞ্চ কোক্সি। এনভিডিয়ার শেয়ার গত বছরের তুলনায় ১৬২ শতাংশ বাড়ায় তাঁর সম্পদও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। আর তাই ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ নিয়ে ফোর্বসের তালিকায় প্রথমবারের মতো নাম লিখিয়েছেন তিনি। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানও রয়েছে টেঞ্চ কোক্সির।
সূত্র: ফোর্বস
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন