অর্থনীতি ডেস্ক: দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে দরপতন হচ্ছে। অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। লোকসান কাটিয়ে ওঠার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। ফলে দিন যত যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আতঙ্ক তত বাড়ছে। আতঙ্কে অনেকেই দিনের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। ফলে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা যাচ্ছে। এতে সূচকের যেমন পতন হচ্ছে, তেমনি কমে আসছে লেনদেনের গতি। গত কয়েক কার্যদিবসের মতো রোববারও (১৯ মে) বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে ক্রেতা সংকটে পড়ে প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান। ফলে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সবকটি খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামে ঢালাও পতন হয়েছে। বাজারটিতে ৮৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক দেড় শতাংশের ওপরে কমে গেছে। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে পাঁচশ কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। ফলে এ বাজারটিতেও সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা ছয় কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার। এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে এক সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা কমে যায়। আর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১৪৩ পয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসই’র প্রধান সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। প্রথম ঘণ্টার লেনদেনেই ডিএসই’র প্রধান সূচক ৬০ পয়েন্ট পড়ে যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে বিক্রির চাপ। ফলে লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ক্রেতা সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। এতে বাড়তে থাকে সূচকের পতনের মাত্রা। স্বাভাবিকভাবেই সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৮৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৬৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল, এরচেয়েও কম ৩৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়। রোববার টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিচ হ্যাচারির শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ই-জেনারেশনের ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, লাভেলো আইসক্রিম, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের বিষয়ে বিনিয়োগকারী আশরাফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, কিছুদিন আগের চিত্র দেখে মনে হয়েছিল বাজার ভালো হচ্ছে। এতে বাজার নিয়ে নতুন আশায় ছিলাম। কিন্তু সব আশা ফিকে হয়ে গেছে। এখন দিন যত যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততো ভারী হচ্ছে। এমনকি লোকসানে দিনের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারছি না। জানি না এই অবস্থা থেকে কবে মুক্তি পাবো। সাগর নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, লেনদেনের শুরুর দিকে বাজারে বড় দরপতন দেখে হাতে থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির আদেশ দেই। কিন্তু আমার আগে আরও অনেকেই একই দামে বিক্রির আদেশ বসান। লেনদেনের পুরো সময় পার হয়ে গেলেও আমার শেয়ার বিক্রি হয়নি। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২ লাখ টাকার ওপরে লোকসানে রয়েছি। প্রতিদিন আশায় থাকি বাজার ভালো হবে। কিন্তু কিছুতেই বাজার ভালো হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে, বাজার তত খাদের মধ্যে চলে যাচ্ছে। লোকসানের চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, রিজার্ভ এবং দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেওয়া নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারের ওপর আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। এই বিক্রির চাপ না কমলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন