প্রভাব বিস্তারে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ক

আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক সরকার৷ তবে ইতিমধ্যে মহাদেশটিতে চীন ও রাশিয়ার শক্তিশালী উপস্থিতি থাকায় তুরস্কের জন্য কাজটি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সম্প্রতি আঙ্কারা বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে৷ সোমালিয়ায় অফশোর তেলের খনি সন্ধান ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেখানে একটি নতুন মিসাইল পরীক্ষাকেন্দ্র চালুর চেষ্টা করছে তুরস্ক৷
১৯৯৮ সালে আফ্রিকান ইনিশিয়েটিভ পলিসি গ্রহণ করার মাধ্যমে অঞ্চলটিতে বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা চুক্তিগুলো দৃঢ় করার উদ্দেশে কাজ করছে তুরস্ক৷ এই নীতির অধীনে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তুরস্ক সরকার প্রচুর শক্তি ও পরিকল্পনা করেছে৷ ইস্তাম্বুলের ইয়েদিটেপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলকান ইপেক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘এর উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা৷ এই বিবেচনায়, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আফ্রিকা অঞ্চল এমনকি মহাদেশটি বেশ স্থিতিশীল৷’
গত দুই দশকে আফ্রিকার দেশগুলোতে তুরস্কের দূতাবাসের সংখ্যা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো৷ ২০০২ সালে আফ্রিকায় তুরস্কের দূতাবাস ছিল ১২টি, যা দুই দশক পর ২০২২ সালে এসে ৪৪-এ উন্নীত হয়েছে৷ তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধির আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায় তুরস্কের ব্যবসায়িক সম্প্রসারণেও৷ ২০০৩ সালে ৫৪ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়ে ২০২২ সালে চার কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে৷ তবে ২০২৩ সালে এই পরিমাণ তিন কোটি ৭০ লাখ এ নেমে আসে৷
আফ্রিকায় তরুণ প্রজন্ম, সেখানকার বাজারে পণ্যের চাহিদা ও ব্যবসায়িক লাভের কারণে আফ্রিকা মহাদেশ তুরস্কের ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়৷ তবে মহাদেশটির বাজারে তুরস্ককে লড়াই করতে হচ্ছে রাশিয়া, চীন ও গালফ উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশগুলোর সঙ্গে৷
তুরস্কের বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে৷ সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে কয়েকটি চুক্তির পর মোগাদিশু তুরস্কের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে৷ জুলাই মাসে তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রী আলপারসলান বায়রাকতার সোমালিয়ার সাথে একটি তথাকথিত হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান ও উৎপাদন চুক্তি সই করেন, যা আঙ্কারাকে সোমালি উপকূলের তিনটি ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের একচেটিয়া অধিকার প্রদান করে৷ চলতি বছর তুরস্ক সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ অথবা অক্টোবরের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে একটি অনুসন্ধান জাহাজ পাঠাতে পারে৷ জরিপ অনুসারে দেশটিতে কমপক্ষে তিন হাজার কোটি ব্যারেল তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে৷
প্যারিস-ভিত্তিক ভূমধ্যসাগরীয় অবজারভেটরি ফর এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট (ওএমইসি) গবেষণা সংস্থাটি হাইড্রোকার্বন ও জ্বালানি সুরক্ষার পরিচালক সোহবেট কারবুজ এই অনুসন্ধান অংশীদারিত্বকে তুরস্কের জ্বালানি সরবরাহ সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি ‘কৌশলগত পদক্ষেপ’ হিসেবে বিবেচনা করেন৷ তুরস্ক আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশের জন্য নিজেদের একটি প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করছে৷ তুরস্কের সংসদ সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সোমালিয়ায় দুই বছরের জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েনের আইন অনুমোদন করেছে৷
ইপেক বলেন, ‘অস্ত্রের প্রয়োজনজনিত ঘটনার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ ২০১১ সাল থেকে সন্ত্রাসীরা সক্রিয় রয়েছে এবং সাহেল অঞ্চলে প্রধান ভূমিকা পালন করছে৷’
সুইডেনের এসআইপিআরআই শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট দ্বারা প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, নাইজেরিয়ার কাছে যুদ্ধ হেলিকপ্টার বিক্রয় ও প্রশিক্ষণ বিমানের পাশাপাশি আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে চালকবিহীন টিবি২ বায়রাকতার ড্রোন বিক্রির মাধ্যমে তুরস্ক সাব-সাহারান আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারীতে পরিণত হয়েছে৷
তবে তুরস্কের সংস্থাগুলোকে চীনের সংস্থাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে৷ বিশেষত বড় প্রকল্পগুলির প্রয়োজনীয় অর্থায়নে চীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী৷ শুধুমাত্র ২০২৩ সালে, আফ্রিকায় চীনের বিনিয়োগ মোট ২৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে৷ এদিকে তুরস্কের বিনিয়োগ প্রায় এক হাজার কোটি ডলার৷ (সূত্রঃ ডয়চে ভেলে)