এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ে আশাবাদী এডিবি – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন

এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ে আশাবাদী এডিবি

  • ২৮/০৯/২০২৪

এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি আগের পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা বেশি সম্প্রসারিত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। শক্তিশালী মার্কিন অর্থনীতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক কম্পিউটার চিপের চাহিদার ঊর্ধ্বগতি ও অন্যান্য রফতানি বাণিজ্য সামনে রেখে পূর্বাভাসে সংশোধন এনেছে সংস্থাটি। তবে এর মধ্যেও ঝুঁকি রয়ে গেছে বলে মনে করছে এডিবি। সংস্থাটির আশঙ্কা, ২০২৪ সালে এ অঞ্চলের শীর্ষ অর্থনীতিতে (চীন) নেমে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বিধিনিষেধ, যা নির্ভর করছে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ওপর।
গত এপ্রিলে এডিবির পূর্বাভাস দিয়েছিল, এ বছর এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু সেই পূর্বাভাসে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন করে বুধবার আঞ্চলিক ঋণদাতা সংস্থাটি জানিয়েছে, এখানকার অর্থনীতি ৫ শতাংশ সম্প্রসারিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, চীন থেকে রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র আরো সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেবে কিনা তা নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।
এ অঞ্চলের অর্থনীতির বেশকিছু ইতিবাচক প্রবণতা তুলে ধরেছে এডিবি। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাত। এ প্রযুক্তি দ্রুত গ্রহণের কারণে এ বছর এশিয়া থেকে কম্পিউটার চিপ ও অন্যান্য উন্নত ইলেকট্রনিকস সরঞ্জামের রফতানি বেড়েছে। একই সঙ্গে কিছু দেশে উল্লেখযোগ্য হারে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম কমছে। তবে পাকিস্তান, লাওস ও মিয়ানমারের মতো দেশে মূল্যস্ফীতি মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে, যা দেশগুলোর অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর এবং এ সম্পর্কিত ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও উপাদানের চাহিদা ক্রমে বেড়ে চলেছে। এতে পূর্ব এশিয়ার দেশ তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া শক্তিশালী ব্যবসায়িক গতি লাভ করেছে। এছাড়া ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করছে এ খাত। এডিবি আশা করছে এ প্রবণতা সামনেও অব্যাহত থাকবে।
ওয়ার্ল্ড সেমিকন্ডাক্টর ট্রেড স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য উদ্ধৃত করে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বিশ্বে মেমরি চিপ বাবদ ব্যয় ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর বাড়বে ৭৭ শতাংশ। এআইয়ের জন্য ডাটা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতে মেমরি চিপ অত্যাবশ্যক বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া এ অঞ্চল থেকে অন্যান্য রফতানি বাড়ছে। এর মধ্যে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি খাতে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্প্রসারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।
প্রবৃদ্ধির এ ইতিবাচক সংশোধনীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেটদের পক্ষে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের পণ্য আমদানিতে উচ্চতর শুল্ক আরোপ হতে পারে। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানির ওপর শুল্ক আরো বিস্তৃত ও তীব্রভাবে বাড়তে পারে। এতে চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন মাত্রা পাবে, যা এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সাশ্রয়ী শ্রম ও বিভিন্ন সুবিধার জন্য অনেক মার্কিন কোম্পানি বিদেশে কারখানা স্থাপনসহ নানাভাবে পরিচালিত হয়। নির্বাচিত হলে শুল্ক আরোপ করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি ব্যয়বহুল করে তোলার ঘোষণা দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাতে কোম্পানিগুলো কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। তবে কমলা হ্যারিস বেশির ভাগ আমদানীকৃত পণ্যের ওপর বড় শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ পণ্যের দাম মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে তুলবে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হচ্ছে, এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বিদেশী ঋণের খরচকে প্রভাবিত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতি ও অন্যান্য পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নীতি বা অর্থনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করলে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার তীব্রভাবে ওঠানামা করতে পারে, এর ফলে রফতানিতে কমতে পারে প্রতিযোগিতা।
এ অঞ্চলে চীনের রিয়েল এস্টেট খাত এখনো অন্যতম বড় অর্থনৈতিক ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে। এডিবি চলতি বছরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতির জন্য ৪ দশমিক ৮ ও ২০২৫ সালের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। ঋণের খরচ কমানো ও আবাসন ক্রয়ে উৎসাহিত করতে বেইজিংয়ের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালবার্ট পার্ক। চীনের পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য ইতিবাচক অগ্রগতির অন্যতম হলো, জ্বালানিতে মূল্যস্ফীতি ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার আগের স্তরে ফিরে এসেছে। যা শ্রীলংকা, চীন ও জাপানের মতো জ্বালানি তেল ও অন্যান্য জ্বালানির আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল অর্থনীতির চাপ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে খাদ্যের দাম কমলেও মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি। জানুয়ারির শেষ দিকে টন প্রতি চালের দাম ছিল ১৬ বছরের সর্বোচ্চ ৬৬৯ ডলার। আগস্টের শেষের দিকে ১২ শতাংশ কমে হয়েছে ৫৮৯ ডলার। ২০২৪-২৫ কৃষিবর্ষে ধানের ফলন রেকর্ড মাত্রায় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া গম ও ভুট্টার দাম কমবে। তবে লা নিনার প্রভাবে বেশি বৃষ্টি হতে পারে, যা কিছু অঞ্চলে উপকারী হলেও অন্য অঞ্চলে ধ্বংসাত্মক বন্যার কারণ হতে পারে।
Source : AP

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us