গত সপ্তাহে সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এও বোঝাতে চাইছে যে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে তাদের টানা তিন বছরের লড়াই সফল হয়েছে। যদিও তাদের মনোভাবের সঙ্গে দেশটির সাধারণ মানুষের একটি অংশ একমত নয়।
সুদহার কমানোর পর মার্কিন ভোক্তাদের ওপর বেশ কয়েকটি জরিপ পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে বার্তা সংস্থা এপি ও এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ। জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ নাগরিক দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। তারা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারীর সময় যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছিল, তার প্রভাবে এখনো তাদের ভুগতে হচ্ছে।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, সুদহার কমানোর এ প্রক্রিয়া ধীরে হলেও ভোক্তাদের মনোভাবকে ইতিবাচক করে তুলবে। কারণ দুই বছর লাগামছাড়া থাকার পর মূল্যস্ফীতি সরকারের প্রত্যাশিত ২ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এর মানে হলো জিনিসপত্রের দাম এখনো বাড়ছে।
সুদহার কমানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে পুরনো গাড়ি থেকে শুরু করে বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। দেশটির অর্থনৈতিক ইতিহাস বলছে, দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতির হার কম ও স্থিতিশীল থাকলে মার্কিনরা একপর্যায়ে গিয়ে এর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আরেকটি ইতিবাচক খবর হলো দেশটিতে বর্তমানে যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, মজুরি বাড়ছে তার চেয়ে বেশি।
মূল্যস্ফীতি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক একটা ইস্যু হয়েও দাঁড়িয়েছে। রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস প্রশাসনের ভুল নীতির কারণে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বাড়ছে।
এপির জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সামলানোর ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প, নাকি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বেশি যোগ্য, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। গত জুনে এপির এক জরিপে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ মানুষ জো বাইডেনের অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে একমত নন।
ফেডারেল ব্যাংক জানিয়েছে, এ মুহূর্তে তাদের মূল লক্ষ্য জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রাখা। ‘স্থিতিশীল দামের’ একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। তিনি বলেন, ‘স্থিতিশীল দাম বলতে এমন একটা পরিস্থিতি বোঝায়, যখন কিছু কেনার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মাথায় মূল্যস্ফীতির বিষয়টি আর থাকবে না।’
তবে পাওয়েল এটা মনে করেন না যে ফেডারেল ব্যাংক দাম স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব এখনো অনেক ভোক্তাকে সইতে হচ্ছে। আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে আমরা প্রকৃত অর্থে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি।’
জরিপ প্রতিষ্ঠান মর্নিং কনসাল্টের অর্থনীতিবিদ সোফিয়া বেইগ বলেন, ‘অর্থনৈতিক চাপ পুরোপুরি না কাটার কারণে অনেক মার্কিনের কাছে ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতিও বেশি মনে হচ্ছে। মানুষ যখন মূল্যস্ফীতির কথা ভাবে, তখন সে চিন্তা করে একটা পণ্যের দাম দু-চার বছর আগে কেমন ছিল। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মানুষ তখনই অভ্যস্ত হতে পারে, যখন তার আয় বাড়ে।’
এ অর্থনীতিবিদ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবকেও উদ্ধৃত করে জানান, অত্যধিক দাম বিষয়ে ফটো ও ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, যা অর্থনীতি সম্পর্কে মার্কিন ভোক্তাদের ম্লান দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির মন্থর বৃদ্ধি সত্ত্বেও গড় দাম সম্ভবত মহামারীর আগের স্তরে ফিরে আসবে না। তবে ধীর মূল্যস্ফীতি সমন্বয় প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে পারে। তিন বছর আগের তুলনায় এখনো গ্রোসারি পণ্যের দাম অনেক বেশি। কিন্তু সর্বশেষ মাসে বেড়েছে দশমিক ৯ শতাংশ। এক গ্যালন গ্যাসের গড় খরচ এক বছর আগের তুলনায় ১৭ শতাংশ কমে ৩ ডলার ২২ সেন্ট হয়েছে। ১৪টি অঙ্গরাজ্যে দাম ৩ ডলারের নিচে। (খবরঃ এপি)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন