লন্ডনে নজরদারির অভাবে বেড়েছে অর্থ পাচার – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

লন্ডনে নজরদারির অভাবে বেড়েছে অর্থ পাচার

  • ২৫/০৯/২০২৪

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে অবৈধ অর্থ প্রবেশ ও বিনিয়োগের অভিযোগ পুরনো। এমনকি এ বছরের শুরুতে নগদ অর্থের অবৈধ প্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশটির তৎকালীন উপপররাষ্ট্র সচিব অ্যান্ড্রু মিচেল। তিনি জানিয়েছিলেন, লন্ডনে এবং যুক্তরাজ্যের অংশ না হয়েও রাজতন্ত্রের অধীনে রয়েছে, এমন অঞ্চলের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে— বিশ্বের কালো টাকার প্রায় ৪০ শতাংশ। এ অবস্থার জন্য সম্প্রতি নজরদারির অভাবকে দুষেছে লন্ডনের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর্থিক খাতের নজরদারি সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (এফসিএ)। সংস্থাটি বলছে, তত্ত্বাবধানের অভাব কার্যকরভাবে অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে, যা লন্ডনেও দেখা যাচ্ছে। শহরটিতে আইনজীবী, বুককিপার ও হিসাবরক্ষকের মতো পেশাদারদের ওপর পর্যাপ্ত নজরদারি নেই। এ অবস্থায় অবৈধ লেনদেন মোকাবেলা করতে আর্থিক খাতের পেশাদারদের ওপর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
এফসিএ সর্বশেষ প্রতিবেদনে ব্যক্তি ও ব্যবসা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ ও আইন বিষয়ে তত্ত্বাবধান করে, এমন যুক্তরাজ্যের ২৫টি পেশাদার সংস্থার কাজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তদন্তে দেখা গেছে, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (এএমসি) তত্ত্বাবধানে সংস্থাগুলোর নজরদারি খুবই দুর্বল। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এ খাতে বছরে ৭৩ পাউন্ডের মতো খরচ করছে। আবার অনেকে দেখভালের দায়িত্ব না নিয়ে পুরোপুরি তৃতীয় পক্ষের আউটসোর্সিং নির্ভর ছিল।
আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে নজরদারি সংস্থাগুলোর ক্ষমতার ব্যবহারে ‘দুর্বলতা’ প্রমাণ পেয়েছে এফসিএ। ফলে নিয়ম লঙ্ঘনজনিত কারণে জরিমানার পরিমাণ কমেছে। এমনকি আইনজীবী বা হিসাবরক্ষকদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ও ধারাবাহিকভাবে তথ্য দিতেও ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাগুলো। এতে যুক্তরাজ্যে অবৈধ অর্থ প্রবাহে ঠেকানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করেছে।
ছয় বছর ধরে এফসিএ পেশাদার সংস্থাগুলোর সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এবারের প্রতিবেদনটি তাদের অফিস ফর প্রফেশনাল বডি এএমএল সুপারভিশনের (ওপিবিএএস) পঞ্চম প্রতিবেদন। ২০১৭ সালে দুই ডজনেরও বেশি পেশাদার সংস্থার অর্থ পাচারবিরোধী কাজের তদারকির জন্য এ প্রতিবেদন তৈরি শুরু হয়। আইন লঙ্ঘন হলে এ সংস্থাগুলো সদস্যদের বরখাস্ত বা জরিমানা করতে পারে।
এ নজরদারি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ল সোসাইটি, কাউন্সিল ফর লাইসেন্সড কনভেনার্স, চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যাক্সেশন টেকনিশিয়ান ও সলিসিটর রেগুলেশন অথরিটি। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে কোন সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়, সেখানে নাম উল্লেখ করা ছাড়াই নয়টি সংস্থার কাজের নমুনা দেয়া হয়েছে।
এ পেশাদার সংস্থাগুলো লন্ডনজুড়ে বিস্তৃত আইনি ও হিসাবরক্ষণ সংস্থাগুলোকে নিরীক্ষণ করে। এর মধ্যে সেসব উচ্চ ঝুঁকির সংস্থাও অন্তর্ভুক্ত, যারা সহজে অর্থ পাচার জন্য ব্যবহার হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে কনভেয়েন্সিং ফার্মের কথা বলা যায়। এসব সংস্থা সম্পত্তি স্থানান্তর পরিচালনা করে এবং ট্রাস্ট ও কোম্পানি পরিষেবা দেয়ার মাধ্যমে সম্পদের মালিকানা গোপন ও অবৈধ মুনাফা লুকানোর জন্য নতুন ব্যবসা তৈরিতে সাহায্য করে।
ওপিবিএএসের উদ্দেশ্য নিয়ন্ত্রণজনিত দুর্বলতার মূলোৎপাটন ও অবৈধ অর্থের কেন্দ্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘস্থায়ী দুর্নামের বিরুদ্ধে লড়াই। এটি পেশাদার সংস্থার ওপর জরিমানা আরোপ বা আদায় করার ক্ষমতা রাখে না, তবে কিছু কাজে তাদের বাধা দিতে পারে। এছাড়া অর্থ পাচারবিরোধী নজরদারি সংস্থার তালিকা থেকে কোনো সংস্থাকে অপসারণের সুপারিশ করতে পারে।
এফসিএর পরিচালকদের একজন আন্দ্রেয়া বোয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এফসিএ যুক্তরাজ্যে আর্থিক অপরাধ হ্রাস ও প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওপিবিএএসের মাধ্যমে আমরা যেখানে ব্যর্থতাগুলো পেয়েছি, সেগুলো মোকাবেলায় হস্তক্ষেপ করেছি। কিন্তু এখনো প্রয়োজনীয় ধারাবাহিক পদক্ষেপ, কার্যকর উত্তরণ দেখতে পাচ্ছি না।’
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলির মতে, এফসিএ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার বিষয়ে আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের ওপর নজরদারি কাজ পেশাদার সংস্থার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, তা কাজ করছে না এবং অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।’
এ পরিস্থিতি উত্তরণে ‘জরুরিভাবে উচ্চাভিলাষী দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরো বিষয়টি দেখতে’ বলে মন্তব্য সুসান হাওলির। তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচারবিরোধী সংস্থার তত্ত্বাবধানে মৌলিক সংস্কারের দিকে নজর দিতে হবে। বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তা টেকসই নয়। শুরুতে ব্যর্থ সংস্থাগুলোকে নজরদারির ভূমিকা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে দেয়া উচিত।’
প্রতিবেদনে নমুনা হিসেবে বাছাই করা নয়টি পেশাদার সংস্থার কোনোটিই অর্থ পাচার প্রতিরোধে সম্পূর্ণ কার্যকর ছিল না। এছাড়া সদস্যদের নজরদারিতে ক্ষমতা ও পদ্ধতি ব্যবহার কমার পাশাপাশি আগের বছরের তুলনায় জরিমানার সংখ্যা ও অর্থ কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জরিমানার পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৮১ পাউন্ড, যা এক বছর আগের ৯ লাখ ৪০ হাজার ৭২৮ পাউন্ডের তুলনায় অনেক কম। এফসিএ বলেছে, জরিমানার অংক থেকে বোঝা যাচ্ছে, সংস্থাগুলো তাদের ক্ষমতা সম্পূর্ণ কাজে লাগাচ্ছে না।
এফসিএর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি বিভাগ বলছে, তারা এফসিএর সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ব্যবস্থার সংস্কার করে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us