শেয়ার, বন্ড ও মুদ্রাবাজারে সতর্ক দৃষ্টি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন

শেয়ার, বন্ড ও মুদ্রাবাজারে সতর্ক দৃষ্টি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের

  • ২১/০৯/২০২৪

চার বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবার সুদহার কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। এর প্রভাবে দেশটির অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নাকি মন্দার দিকে ধাবিত হবে, শিগগিরই তা বোঝার উপায় নেই। এমন অবস্থায় শেয়ার, বন্ড ও মুদ্রাবাজারের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা।
ফেড গত বুধবার ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে আনে। এর প্রভাবে শুরুতে কিছুটা স্থবির থাকলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান ঘটে। পরদিন বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। ডলারের বিপরীতে ইউরো, পাউন্ডসহ নরওয়ের ক্রোন ও অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বিনিময় হারও বেড়েছে।
কিছু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, মার্কিন অর্থনীতি এরই মধ্যে ভালো অবস্থায় পৌঁছেছে। সুদহার কমানোর মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরো বেশি সমর্থন দেয়া হচ্ছে। এটি সাধারণভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে, যা ইতিবাচক। এর প্রভাবে জ্বালানি তেল ও ধাতব পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে। ফলে এটি উল্টো মুল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
এদিকে ফেডের সুদহার কর্তন বৈশ্বিক অন্য আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। মুল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক চাহিদা নিয়ে অস্থিতিশীলতার কারণে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। এমন সিদ্ধান্তে সুদহার কমানোর প্রত্যাশা কমিয়ে দিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।
ব্রিটিশ বিনিয়োগ ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি রয়্যাল লন্ডনের মাল্টি-অ্যাসেট বিভাগের প্রধান টেভর গ্রিথাম বলেন, ‘আমি মনে করি ফেড বাড়তি হারে সুদহার কমিয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি দ্রুততর হবে। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুদহার কমানোর ঘটনা খুব বেশি না-ও দেখা যেতে পারে।’ সামনে বাজারে উচ্চমাত্রার অস্থিরতা দেখা যেতে পারে বলেও মনে করেন গ্রিথাম।
লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের (এলজিআইএম) ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় পরিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান। সুদহার কমানোর প্রভাবে মার্কিন অর্থনীতিতে ধীরগতি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে এলজিআইএমের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান টিম ড্রেসন বলেন, ‘আমি আরো অস্থিরতা ও ঝুঁকির সম্ভাবনা দেখছি।’
তার প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার এবং বন্ড মার্কেটে খুব বেশি বিনিয়োগ করছে না বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, চলতি বছর নাগাদ ৭২ বেসিস পয়েন্ট এবং ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে ১৯৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমাতে পারে ফেড। তবে নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা সংক্রান্ত পূর্বাভাস প্রায় ৮০ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। এছাড়া আগামী মাসে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) সুদহার না কমানোর সম্ভাবনাও দেখছেন তারা। তবে এসব পূর্বাভাসের তথ্য স্থিতিশীল নয় বলে মনে করেন অনেক বিনিয়োগকারী।
ইউরোপের দেশগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর। তাছাড়া অঞ্চলটির মুল্যস্ফীতির হার দ্রুতগতিতে কমার লক্ষণও নেই। ফলে শিগগিরই সুদহার কমানোর মতো সিদ্ধান্ত নেয়া ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) জন্য কঠিন।
ফিডেলিটি ইন্টারন্যাশনালের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক শামিল গোহিল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে দ্রুত সুদহার কমাতে এবং ব্রিটিশ সরকারি বন্ড (গিল্টস) বাড়াতে উৎসাহিত করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার আরো কমানোর প্রত্যাশা ভুল প্রমাণিত হলে এ ধরনের অবস্থান ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
ব্লুবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক নীল মেহতা বলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ। মুল্যস্ফীতির হারও এখনো লক্ষ্যমাত্রার ওপরে। ফলে ফেড খুবই উদ্দীপিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সুদহার কমাচ্ছে বলে ধরে নেয়া যায়।’
অন্যদিকে ইউরোজোনের মূল মুল্যস্ফীতি ৩ শতাংশের সামান্য নিচে। অঞ্চলটিতে জুন ও সেপ্টেম্বরে দুই দফায় সুদহারও কমানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ আবারো সুদহার কমানো হবে তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু ফেড সুদহার কমাতে থাকলে তাতে ইউরোর দাম ডলারের বিপরীতে বাড়বে। ফলে ডলারের বিনিময়ে রফতানিতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে ইউরোপ। তখন সুদহার কমাতে ইসিবির ওপর চাপ বাড়বে।
শ্রডার্সের ফিক্সড-ইনকাম স্ট্র্যাটেজিস্ট মার্কাস জেনিংস বলেন, ‘ইউরোজোনের ধীর অর্থনীতির পাশাপাশি ফেডের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তে জার্মান বন্ড আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।’
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার সূচক ভিআইএক্স সূচক গত বৃহস্পতিবার ১৬ দশমিক ৬-এ নেমে এসেছে। এ সূচক আগস্টে প্রায় ৬৬ পয়েন্টে পৌঁছেছিল। বৈশ্বিক শেয়ার সূচক এমএসসিআই গত ৫ আগস্টে পতনের পর ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি মার্লবোরোর চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার শেলডন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘বাজারে অস্থিরতা বাড়তে পারে। কারণ পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বলছে, সুদহার কমানোর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। তবে সরকারি বন্ডের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে মন্দার আশঙ্কা রয়েছে।’ (খবরঃ রয়টার্স)

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us