যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে হিসপ্যানিক হেরিটেজ মান্থ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গত সাড়ে তিন বছরে ৫০ লাখ হিসপ্যানিক নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন বলে দাবি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, হিসপ্যানিক ইতিহাসই আমেরিকার ইতিহাস। এই সত্যটাকে সম্মান জানাতে হবে। আইনি লড়াইয়ে জয়ী হতে পারলে পাঁচ মিলিয়নের বেশি হিসপ্যানিকের শিক্ষাঋণ মওকুফের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বাইডেন আমেরিকান জাতি গঠনে হিসপ্যানিকদের ভূমিকার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান তুলে ধরেন। হিসপ্যানিকদের ঐতিহ্য রক্ষায় কমিউনিটি কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে সরকার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলেও জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
হিসপ্যানিক কমিউনিটির অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়ে বাইডেন বলেছেন, অভিবাসীরাই আমেরিকার প্রাণ। তারা আমেরিকার রক্তকে বিষাক্ত করে না। এছাড়া তার প্রশাসন হিসপ্যানিকদের সঙ্গে নিয়ে দেশের ইতিহাস গড়তে চায় বলে দাবি করেন বাইডেন।
অর্থনীতি এখন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আশাবাদী বলেও জানান। তবে তার মতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধরে রাখা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে দেড় লাখ শিক্ষার্থীর ঋণ মওকুফ করার ঘোষণা দেন জো বাইডেন। যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঋণ হিসেবে ১২ হাজার ডলার বা তার কম পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়েছিলেন এবং ১০ বছর ধরে এ ঋণ পরিশোধ করে আসছিলেন, তাদের বাকি ঋণ মওকুফ হবে নতুন এ পরিকল্পনার আওতায়। এরপর গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের দুই লাখ ৭৭ হাজার ছাত্রের শিক্ষাঋণ মওকুফের ঘোষণা দেয় বাইডেন প্রশাসন। মওকুফ করা এই ঋণের পরিমাণ ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ান বা ৭৪০ কোটি ডলার।
ঋণ মওকুফ করার ফলে দেশটির শিক্ষার্থীরা নিজ স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। সে সময় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২০ কোটি ডলার ঋণ মওকুফের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রগতিশীল ও তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের সমর্থন আগামী নভেম্বরে পুনর্র্নিবাচনে জো বাইডেনকে জিততে সহায়তা করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে রিপাবলিকানরা মূলত ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থী ঋণ মওকুফের বিপক্ষে সোচ্চার। তারা এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে থাকেন।
কলেজ ডিগ্রির জন্য দেশটির অনেক শিক্ষার্থী বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা বইছেন। তাই ক্ষমতায় আসার পর শত শত বিলিয়ন ডলারের ঋণ মওকুফ করার পরিকল্পনা করেছিলেন বাইডেন। রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ মওকুফ করার পরিকল্পনা করেন বাইডেন।
বাইডেনের পরিকল্পনায় দুই ধরনের ঋণ মওকুফের কথা রয়েছে। একটি হচ্ছে ১০ হাজার ডলার মওকুফ, আর অন্যটিতে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত ঋণমুক্তি দেয়া হবে। যেসব ব্যক্তি একা বাস করেন এবং বছরে এক লাখ ২৫ হাজার ডলারের কম আয় করেন, তারা ঋণের ১০ হাজার ডলার মওকুফ পাবেন। আর বিবাহিত হলে, একত্রে ট্যাক্স দিলে, কোনো পরিবারের প্রধান হলে এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির আয় আড়াই লাখ ডলারের কম হলে তিনিও ১০ হাজার ডলার মওকুফ সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে এর যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে ২০২০-২০২১ সালে ব্যক্তির অ্যাডজাস্টেড গ্রস ইনকামের ওপর। অন্যদিকে কেউ যদি ‘পেল গ্র্যান্ট’-এর অধীনে শিক্ষাঋণ পেয়ে থাকেন, তাহলে এসব শর্তপূরণ সাপেক্ষে তিনি মোট ২০ হাজার ডলার ঋণ মওকুফ পাবেন।
তবে এ পরিকল্পনায় বাধা দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ফলে কিছুটা পিছু হঠতে বাধ্য হন বাইডেন। ঋণ মওকুফের জন্য কয়েক দফা নতুন পরিকল্পনা হাতে নিতে বাধ্য হয় বাইডেন প্রশাসন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সব মিলিয়ে ৩৯ লাখ মার্কিন শিক্ষার্থীর ১৩৮ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের শিক্ষাঋণ মওকুফ করেছে বাইডেন প্রশাসন।
Source : CNBC
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন