বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চলতি বছর ভ্রমণ ও পর্যটন খাত ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবদান রাখতে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি)। সংস্থাটির মতে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ১১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। খবর গালফ বিজনেস। এর আগে গত বছর বৈশ্বিক জিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের হিস্যা ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। ওই বছর এ খাতে ৩৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট রিসার্চ’ (ইআইআর) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডব্লিউটিটিসি। ওই প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া হয়, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান আগের বছরের তুলনায় ৭৭ হাজার কোটি ডলার বাড়তে পারে। প্রতিবেদনে ১৮৫টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ১৪২টি দেশে পর্যটন খাতের আয় প্রাক-কভিড পর্যায়কে ছাড়নোর পূর্বাভাস দেয়া হয়। খাতটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৪ কোটি ৮০ লাখ কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১ কোটি ৩৬ লাখ বেশি।
প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ব্যয় বাড়ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। চলতি বছর আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় ১ দশমিক ৮৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে, যা ২০১৯ সালের সর্বোচ্চ ব্যয়ের কাছাকাছি। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ পর্যটন ব্যয়ও রেকর্ড ৫ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ে। তবে তা এখনো ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ কম। অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী এ খাতে আয় বাড়ছে। ফলে এ খাত থেকে মহামারী-পূর্ব সময়ের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে।
ডব্লিউটিটিসির তথ্যানুসারে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুই প্রধান পর্যটন বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে আন্তর্জাতিক পর্যটক ব্যয় অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে বাড়ছে।
ডব্লিউটিটিসির ২০২৪ সালের ইআইআর প্রতিবেদনে আগামী দশকেও ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, ২০৩৪ সালের মধ্যে ভ্রমণ ও পর্যটন খাত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখতে পারে, যা বৈশ্বিক জিডিপির ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময় এ খাতে বিশ্বব্যাপী ৪৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
উড়োজাহাজ পরিবহন পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের প্রবৃদ্ধি পরিমাণের অন্যতম সূচক। আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) তথ্যানুসারে, চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে উড়োজাহাজ পরিবহন বাড়ছে। উড়োজাহাজের যাত্রী চাহিদা সাধারণত রেভিনিউ প্যাসেঞ্জার্স কিলোমিটারস বা আরপিকেএস সূচক দ্বারা পরিমাণ করা হয়। চলতি বছর আরপিকেএস আগের বছরের তুলনায় ২১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে এয়ারলাইন সংস্থাগুলোর যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা সূচক অ্যাভেইল্যাবল সিটস কিলোমিটার (এএসকেএস) ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে লোড ফ্যাক্টরের মাধ্যমে উড়োজাহাজের আসনের কী পরিমাণ আসনে যাত্রী পরিবহন হয়েছে, তা পরিমাণ করা হয়। চলতি বছর লোড ফ্যাক্টর ৮০ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ চাহিদাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক রুটগুলোয় যাত্রী চাহিদা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ে। এর বিপরীতে আন্তর্জাতিক রুটে আসন সক্ষমতাও আগের বছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং লোড ফ্যাক্টর সামান্য বেড়ে ৭৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণ ভ্রমণেও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। আগের বছরের তুলনায় ভ্রমণ বেড়েছে ১৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ আসন বেড়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন