ইউরোপে এক দশকে বন্ধকি খাতে সবচেয়ে ধীরগতি – The Finance BD
 ঢাকা     বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

ইউরোপে এক দশকে বন্ধকি খাতে সবচেয়ে ধীরগতি

  • ১১/০৯/২০২৪

বিদ্যমান উচ্চ সুদহারের কারণে ইউরোপের অর্থনীতিতে কয়েক বছর মন্থরগতি লক্ষণীয়। এর প্রভাবে চলতি বছরে অঞ্চলটির ব্যাংক খাত বন্ধকি ঋণের ক্ষেত্রে রেকর্ড শূন্য প্রবৃদ্ধির দিকে এগোচ্ছে। তবে ২০২৫ সাল নাগাদ এ খাতে পুনরুদ্ধারের আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে সুদহার হ্রাস ও স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি এতে ভূমিকা রাখবে।
গত কয়েক বছরে ইউরোজোনে নতুন বন্ধকি ঋণ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে গ্রহীতা। কারণ ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) ঋণাত্মক হারের বর্ধিত সময়ের পর সুদহার রেকর্ড উচ্চতায় বাড়িয়েছে। ঋণাত্মক সুদহারের মানে হলো আমানতের বিপরীতে সুদ পাওয়ার বদলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অর্থ রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে গুনতে হয় বাড়তি অর্থ। ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে তারা কম সুদ দেয় বা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অর্থও পেতে পারে। মূলত মন্থর প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অর্থনীতিকে উদ্দীপ্ত করতে ঋণাত্মক সুদহার প্রযোজ্য হয়। যার মাধ্যমে ব্যাংককে ঋণ দিতে ও ক্রেতাকে আরো ব্যয়ে উৎসাহ দেয়া হয়।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে ইউরোপিয়ান ব্যাংকিং অথরিটি এবং জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছে খাতসংশ্লিষ্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইওয়াই। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ইউরোজোনে বন্ধকি ঋণ এ বছরে মোটেও বাড়বে না। ২০২২ সালে অঞ্চলটির বন্ধকি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরের বছরগুলোয় প্রবৃদ্ধি ক্রমে নিম্নমুখী হয়েছে, সে ধারা ২০২৪ সালেও অব্যাহত থাকবে। এর আগে সবচেয়ে নিম্নহারে প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয় ২০১৪ সালে, যার পরিমাণ ছিল দশমিক ২ শতাংশ।
এ বিষয়ে ইওয়াইর গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান ওমর আলী বলেন, ‘এ বছর বন্ধকি খাতে কোনো পরিবর্তন না আসায় হাউজিং মার্কেট সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। তবে জীবনযাত্রা ও ঋণের খরচ কমে যাওয়ায় বাড়ি কেনার পাশাপাশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষেই ঋণের চাহিদা আবার বাড়তে পারে।’
পরামর্শক সংস্থাটি আশা করছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বন্ধকি ঋণ খাতে প্রবৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধার হবে। এ বছর ২০২৪ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ সম্প্রাসরণ হতে পারে খাতটি। সুদহার হ্রাস ও মূল্যস্ফীতির গতি মন্থর হয়ে এলে ২০২৬ সালে বন্ধকি খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, যা হাউজিং মার্কেটে চলমান চাপ কিছুটা কমিয়ে আনবে।
কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি অন্যতম চাপ হিসেবে সামনে আসে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রধান অস্ত্র হিসেবে সুদহার বাড়িয়েছে প্রায় সব অর্থনীতি, যা অনেক ক্ষেত্রে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভ এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। একইভাবে ইসিবি সুদহার ২০২২ সালে শূন্য শতাংশ থেকে বাড়িয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেকর্ড ৪ শতাংশ উচ্চতায় নিয়ে যায়।

গত জুনে ইসিবি তার সুদহার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। মূল্যস্ফীতির হার শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনের মাসগুলোয় সুদহারে আরো কাটছাঁট আনবে বলেও আশা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ইউরোজোনে মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকই বন্ধকি সম্পর্কিত। ফলে এ খাতের পতন প্রায়ই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অর্থনৈতিক চাপে ঋণের অন্যান্য ধরনও প্রভাবিত হয়েছে।
এ অঞ্চলে ব্যবসায়িক ঋণ গত বছর দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তবে চলতি বছর এর বিপরীতে দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু ইওয়াইর পূর্বাভাস অনুসারে, ফ্রান্স ও জার্মানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ২০২৬ সালে এ অঞ্চলে ব্যবসায়িক ঋণ ৪ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া এ বছর ভোক্তা ঋণ বাড়তে পারে দশমিক ৯ শতাংশ। সেখান থেকে ২০২৬ সালে ৪ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
পূর্বাভাস অনুসারে, অপরিশোধিত ঋণ থেকে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলো মাঝারি পর্যায়ের লোকসান দেবে। তবে তা সামগ্রিক খাতে বড় কোনো ঝুঁকি নয়। চলতি বছরে নন-পারফর্মিং লোনের পরিমাণ মোট ঋণের ২ শতাংশ হবে, যা ২০২৫ ও ২০২৬ সালে বেড়ে ২ দশমিক ৩ শতাংশে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে ইউরোজোন ঋণ সংকটের সময় নন-পারফর্মিং ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ সাম্প্রতিক বছরে রেকর্ড উচ্চতার চেয়ে অনেক কম থাকবে নন-পারফর্মিং ঋণের পরিমাণ।
সামনের বছরে ইউরোপে বন্ধকি ঋণের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা ওমর আলীর। তার মতে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলো কার্যক্রম বৃদ্ধি ও আর্থিক পরিকল্পনার রূপান্তরে আরো বেশি মনোযোগ দিতে সক্ষম হবে। (খবরঃ এফটি)

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us