যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে কর্মসংস্থান বাড়ার আভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। একই সময়ে দেশটিতে বেকারত্বের হার কমে ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে যেতে পারে। সম্প্রতি রয়টার্সের এক জরিপের এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্মসংস্থানের এমন চিত্র নির্দেশ করে, শ্রমবাজারের অস্থিরতা থাকলেও তা এখন কিছুটা স্থিতিশীল। ফলে চলতি মাসে ফেডারেল রিজার্ভ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদহার কমালে মার্কিন অর্থনীতি তা সামাল দেয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ অবস্থায় সুদহার কমানোর প্রত্যাশা বাড়বে।
মার্কিন শ্রম বিভাগের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা ভোক্তাদের আস্থা ফেরাতে সহায়তা করবে। এর আগে গত জুলাইয়ে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছায়, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতে ভোক্তাদের মধ্যে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। টানা চতুর্থ মাসে বেকারত্বের হার বাড়ায় সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর আলোচনাও শুরু হয়েছিল।
বোস্টন কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ব্রায়ান বেথুন বলেন, ‘উচ্চ সুদহারের কারণে অর্থনীতি ধীরে ধীরে একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”এখন পর্যন্ত দশমিক ২৫ শতাংশ সুদহার কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে তাড়াহুড়ো করে দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর প্রয়োজন নেই।’
রয়টার্সের অর্থনীতিবিদদের এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, গত মাসে কৃষি ছাড়া অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো কর্মসংস্থান বেড়ে থাকতে পারে। জুলাইয়ে এ ধরনের কর্মসংস্থান ১ লাখ ১৪ হাজার পর্যন্ত বেড়েছিল, যা এ বছরের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। পূর্বাভাসগুলো ১ লাখ থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজারের মধ্যে ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, নিয়োগের হার কমে যাওয়ায় শ্রমবাজারে এ মন্থরতা। এর পেছনে ছাঁটাইয়ের কোনো ভূমিকা নয়। বরং ছাঁটাই এখনো ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে।
তবে বেকারত্বের হার বাড়ার জন্য অভিবাসনের ঊর্ধ্বগতিকে আংশিকভাবে দায়ী করা হচ্ছে। গত বছরের এপ্রিলে বেকারত্বের হার পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়ছিল। ফলে অর্থনীতিকে এখন প্রতি মাসে ১ লাখ ৭৫ হাজার থেকে দুই লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে, যাতে কর্মক্ষম জনসংখ্যার বৃদ্ধি সামাল দেয়া যায়।
জুলাইয়ে হারিকেন বেরিল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোয় ধীরে ধীরে কর্মসংস্থান তৈরির আশা করা হচ্ছে। তবে শ্রম বিভাগের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকস (বিএলএস) জানিয়েছে, বেরিলের কারণে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যায়নি। ৪ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ জানিয়েছে, তারা খারাপ আবহাওয়ার কারণে কাজে যেতে পারেনি। এটি জুলাইয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক অনুপস্থিতির রেকর্ড। সংস্থাটিই কর্মসংস্থান প্রতিবেদন তৈরি করে।
অক্ফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ ন্যান্সি ভ্যান্ডেন হাউটেন বলেন, ‘জুলাইয়ে বেরিল ঝড়ের কারণে কর্মসংস্থান বাজারে প্রভাব পড়ার অনেক লক্ষণ ছিল। এর মধ্যে রয়েছে খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনেকের কাজ না করা বা শুধু খণ্ডকালীন কাজ করা, অস্থায়ীভাবে ছাঁটাই হওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নির্মাণ ও খনি খাতে কাজের সময় কমে যাওয়া।’
তবে আগস্টের কর্মসংস্থানের চিত্র প্রাথমিক পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা কম হওয়ার প্রবণতা থাকে। পরে তা সংশোধন করে বাড়ানো হয়।
শিক্ষা খাতে নিয়োগ প্রায়ই বেড়ে যায়। এটি যাতে প্রতিবেদনের সামগ্রিক তথ্যকে প্রভাবিত করতে না পারে, সেজন্য সরকারের মডেল ব্যবহার করে পূর্বাভাস দেয়া হয়। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাবর্ষ শুরুর তারিখ ভিন্ন হওয়ায় এটি প্রতিবেদনকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৩ বছরে ১০ বার আগস্টের প্রাথমিক কর্মসংস্থানের সংখ্যা পরে সংশোধন হয়ে বেশি হয়েছে।
ব্রিন ক্যাপিটালের জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কনরাড ডেকোয়াড্রোস বলেন, ‘আগস্টের হতাশাজনক কর্মসংস্থান প্রতিবেদন অতীতে ফেডারেল রিজার্ভের সেপ্টেম্বরের মিটিংয়ে সুদহার সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করেছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলা হয়, আগস্টের কর্মসংস্থান প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সেপ্টেম্বরের সুদহারসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ভুল হতে পারে।’ (খবর: রয়টার্স)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন