ফিলিস্তিনের গাজায় গত বছর থেকে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। বিশ্লেষকরা সে সময় ধারণা করেছিলেন, অর্থনীতির ওপর এর সামান্যই প্রভাব পড়বে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় ইসরায়েলে বিনিয়োগ আকর্ষণ দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রায় এক বছর ধরে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে। এর জেরে ইসরায়েল লেবানন ও সিরিয়ায়ও হামলা চালিয়েছে। ফলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সম্পাদকীয় পরিচালক প্যাট থ্যাকার বলেন, ‘চলমান যুদ্ধ অর্থনীতি এবং সরকারি অর্থায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ গত মাসে ইসরায়েলের ক্রেডিট রেটিং ‘এ প্লাস’ থেকে কমিয়ে ‘এ’ করেছে এবং নেতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে গাজা-ইজরায়েল যুদ্ধ, ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এবং বিভিন্ন স্থানে সামরিক অভিযানগুলোর প্রভাবকে দায়ী করেছে সংস্থাটি।
ফিচ ২০২৪ সালে ইসরায়েলের বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের কারণে সামরিক ব্যয় বাড়ায় মধ্যমেয়াদে ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৭০ শতাংশের ওপরে থাকবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ফিচ বলছে, ‘গাজার সংঘাত ২০২৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এটি অন্যান্য স্থানেও বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মানবিক ক্ষতির পাশাপাশি এটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক ব্যয়, অবকাঠামো ধ্বংস এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও বিনিয়োগে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, যা ইসরায়েলের ক্রেডিট মেট্রিক্সের আরো অবনতি ঘটাতে পারে।’
এ প্রেক্ষাপটে ব্যাংক অব ইসরায়েল জুলাইয়ে দেশের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস এপ্রিলে দেয়া পূর্বাভাস থেকে ১ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে এনেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের প্রভাবমুক্ত হয়ে ইসরায়েলের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগতে পারে। প্রসঙ্গত, ইসরায়েল চলতি বছরে ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৪ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেলিমারের ইমার্জিং মার্কেট স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান হাসনাইন মালিক বলেন, “‘ইসরায়েলের ভেতরে এবং আশপাশে সংঘাত যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, দেশটির অর্থনীতি তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ঝুঁকি বাড়বে।”রাজনৈতিক কৌশলের সঙ্গে সঙ্গে সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
সম্প্রতি গাজার একটি টানেল থেকে ছয় ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ উদ্ধার হয়। এর পরই শোক ও ক্ষোভে দেশটির রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী। হিস্তাদ্রুত শ্রমিক ফেডারেশন ধর্মঘটের ডাক দেয়।
এর মাধ্যমে গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসের সঙ্গে চুক্তি করতে ইসরায়েলি সরকারের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। তবে রাজধানী তেল আবিবের একটি শ্রম আদালত নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘণ্টা আগে স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার মধ্যে ধর্মঘট শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ধর্মঘটের কারণে তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর এবং শহরের বাস সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানা গেছে। সরকারি কর্মচারীদের কেউ কেউ কাজে যোগ না দিয়ে ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন।
ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় ও রেইচমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ওমর মোয়াভ বলেন, “‘সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে অর্থনীতি ও বাজারের ওপর ধর্মঘটের উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ এবং বর্তমান অদক্ষ সরকার ইসরায়েলি অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করছে।’
Source : The National
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন