চলতি বছর চীনের ইস্পাত রফতানি আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সাংহাইভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাইস্টিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, রফতানি বাড়ার অর্থ হলো চীন বিশ্ববাজারে তুলনামূলক কম দামে বিপুল পরিমাণ ইস্পাত সরবরাহ করবে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
মাইস্টিলের তথ্যমতে, চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইস্পাত উৎপাদক। দেশটি ২০২৪ সালে ১০ কোটি টন ইস্পাত রফতানি করতে পারে, যা ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ। প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদকীয় প্রধান ভিভিয়ান ইয়াং বলেন, ‘চলতি বছর এখন পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ ইস্পাত রফতানি হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ মোট ১০ কোটি থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ টন ইস্পাত রফতানি হতে পারে, যা সবচেয়ে বেশি রফতানি হওয়া বছরগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
বিশ্ববাজারে ইস্পাতের চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে চীন। সম্প্রতি দেশটির স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমেছে। এ কারণে উৎপাদকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় রফতানি বাড়াতে মনোযোগী হয়েছেন। একই সময় ইউরোপেও রফতানি বেড়েছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রিস অ্যাডভাইজরি জাপানের বাজার বিশ্লেষক ইয়ান রোপার বলেন, ‘চীন অধিক হারে ইস্পাত উৎপাদন করছে এবং বিশ্ববাজারে রফতানি করছে। ফলে দাম কমে যাচ্ছে।’
রোপার জানান, অসম প্রতিযোগিতায় অন্যান্য দেশের স্থানীয় উৎপাদকরা পিছিয়ে পড়ছেন। তাই শিগগিরই চীনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে আগামী দিনগুলোয় চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য সম্পর্কিত মামলা দায়েরের পরিমাণ বাড়তে পারে।
সম্প্রতি কয়েকটি দেশ চীনা ইস্পাত আমদানির ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছে। এর পরিমাণও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো ও ব্রাজিল চলতি বছর শুল্ক বাড়িয়েছে। ভিয়েতনাম ও তুরস্ক শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। এছাড়া চীন টিনের প্রলেপযুক্ত ইস্পাতজাত পণ্য বিক্রি করছে কিনা এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তদন্ত চলছে।
এদিকে ক্রেতা আকর্ষণে দাম কমানোর ক্ষতিকর প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে উৎপাদকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত উৎপাদকদের সংগঠন চায়না আয়রন অ্যান্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, চীনে গত ১৬ আগস্ট আট বছরের মধ্যে ইস্পাতের দাম ছিল সর্বনিম্ন। বর্তমানে ইউরোপে হট-রোলড কয়েল ইস্পাতের দাম চলতি বছরের জানুয়ারির তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।
চীনের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়ায় দেশটিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কম হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজারে ইস্পাতের চাহিদা কমেছে। তবু দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন কমেনি। এ কারণে রফতানি বেড়েছে। একে উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করে দেশটির শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গত মাসে নতুন ইস্পাত কারখানা অনুমোদন স্থগিত করে দিয়েছে।
কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপে চীনের ইস্পাত রফতানি বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে গাড়ি ও মেশিন তৈরিতে ব্যবহৃত হট-রোলড কয়েল ইস্পাত প্রাধান্য পেতে পারে।
বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক বাওউ স্টিল গ্রুপ আগস্টে জানিয়েছে, ইস্পাত শিল্প দীর্ঘদিন ধরে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ ও ২০১৫ সালেও এ ধরনের অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ হতে পারে।
মাইস্টিলের তথ্যানুসারে, চীনা ইস্পাত কোম্পানিগুলো সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। জানুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত তাদের প্রায় ২৮০ কোটি ইউয়ান বা ৩৯ কোটি ডলার লোকসান হয়েছে। লাভ করতে পেরেছে মাত্র ১ শতাংশ কোম্পানি।
Source : ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন