সম্প্রতি সারা বিশ্বে বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন অর্থনৈতিক চাপ, পরিবর্তিত বাজার পরিস্থিতি, ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তন ও বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে মনোনিবেশ করার লক্ষ্যে তাদের কর্মী এবং কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন করছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতে কোম্পানিগুলোয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত জনবল ছাঁটাই করা হচ্ছে, তবে ভারতের ক্ষেত্রে এ ছাঁটাই হতে পারে ১০-১৫ শতাংশ, অর্থাৎ তুলনামূলক কম।
আসেন্ট এইচআর টেকনোলজিসের সিইও সুব্রহ্মণ্যম এস বলেছেন, যদিও ভারতে কর্মীদের পেছনে কোম্পানিগুলো খরচ কম, তবু কিছু ছাঁটাই ও নতুন করে জনবল নিয়োগ দেয়া বন্ধ হতে পারে। তিনি ধারণা করছেন, বিশ্ব পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এ ছাঁটাই চলবে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর কর্মী ছাঁটাই কমপক্ষে আরো এক বছর অব্যাহত থাকবে, কারণ মার্কিন নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক সংঘাতের মতো বৈশ্বিক সমস্যাগুলো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘ভারতে যারা সম্প্রতি স্নাতক শেষ করেছেন কিংবা ছাত্র অবস্থায় চাকরি পেয়েছেন, শিগগিরই তারা কাজে যোগ দিতে পারেন না। আগামী বছর নতুন গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগও ১২-১৮ মাস বিলম্বিত হতে পারে।’
ভারতে প্রযুক্তি খাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রভাব সীমিত থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে টিমলিজ ডিজিটালের সিইও নীতি শর্মা জানান, অনেক কোম্পানি এখন ধাপে ধাপে ছাঁটাই করতে শুরু করেছে, এতে কোম্পানিগুলো বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে পারে এবং হঠাৎ সমস্যার সম্মুখীন হবে না। ছাঁটাই করা সত্ত্বেও অনেক কোম্পানি ‘চুপচাপ নিয়োগের’ মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মানে পূর্ণকালীন কর্মী বাড়ানোর পরিবর্তে তারা বর্তমান কর্মীদের নতুন পদে স্থানান্তর করছে অথবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে। নীতি শর্মা বলেছেন, ভারতের ৫০ শতাংশ বড় প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগ না করে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে পারছে।
এছাড়া কোম্পানিগুলো এখন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মীদের ধরে রাখার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে ছাঁটাই করছে। আবার অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ভারতীয় প্রযুক্তি সেবার ওপর নির্ভরশীল, যা ভারতকে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়। বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার সত্ত্বেও প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট ভূমিকার জন্য ভারতে কর্মী নিয়োগ কিছুটা বাড়ছে। শর্মা বলেছেন, যদিও আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক মন্দা চরমে পৌঁছতে পারে, তবে ভারত এখনো সে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে না। নতুন গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগ বাড়ছে, বিশেষ করে এআই, ডাটা বিশ্লেষণ ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত চাকরির ক্ষেত্রে।
চলতি বছর বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যাপক জনবল ছাঁটাই করেছে। ইন্টেল ১৫ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছে, টেসলা করেছে ১৪ হাজার ও এসএপি আট হাজার। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া প্রযুক্তি খাতের ছাঁটাই এখন ২০২৪ সালে আরো বাড়ছে। এ ছাঁটাই মূলত দুর্বল আর্থিক অবস্থা, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের কৌশলগত পরিবর্তন ও খরচ কমানোর জন্য বৈশ্বিক কার্যক্রমের কারণে হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। (খবরঃ দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন