গুগল ভেঙে গেলে কী পরিবর্তন আসবে ব্যবসা-বাণিজ্যে – The Finance BD
 ঢাকা     বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

গুগল ভেঙে গেলে কী পরিবর্তন আসবে ব্যবসা-বাণিজ্যে

  • ২৮/০৮/২০২৪

বেশির ভাগ মানুষই অনেক দিন ধরে মনে করছেন, অ্যালফাবেটের সার্চ ইঞ্জিন গুগল একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। কারণ, ইন্টারনেটের জগতে আরও অনেক সার্চ ইঞ্জিন বা ওয়েব ব্রাউজার থাকলেও মানুষ গুগল ছাড়া অন্যগুলো তেমন ব্যবহার করে না বললেই চলে। ফলে ইন্টারনেটের জগতে সার্চ ইঞ্জিন বা ওয়েব ব্রাউজার হিসেবে কিছু খোঁজার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে গুগল। সে জন্যই গুগলে কিছু খোঁজাকে অনেকেই বলেন, গুগল করা। ইংরেজি অভিধানেও অবশ্য গুগল শব্দটিকে ক্রিয়াপদ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তবে এবার সেই ঢাক ঢাক গুড় গুড়ের অবসান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত সম্প্রতি এক রুলে বলেছেন, গুগল কার্যত আইনসিদ্ধ একচেটিয়া কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে এবং ইন্টারনেটের জগতে তাদের যে প্রাধান্য, সেটা ব্যবহার করে তারা প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২৭৭ পৃষ্ঠার রুলিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেই আদালত বলেছেন, ইন্টারনেটের জগতে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখতে যা যা করা দরকার, গুগল তার সবই করেছে এবং সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। এরপর কী ঘটে, এখন সেটাই দেখার বিষয়। এই রুলিং টিকে গেলে মার্কিন সরকার গুগলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে; এমনকি তারা গুগলের মতো বৃহৎ কোম্পানিকে ভেঙেও দিতে পারে। সেটা হলে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি ট্রাস্ট আইনের অধীনে সবচেয়ে বড় ঘটনা হবে, ১৯৮০-এর দশকে সে দেশের কিছু টেলিকম কোম্পানি এবং ২০ শতকের শুরুর দিকে একাধিক তেল কোম্পানি এ আইনের অধীনে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
গুগল ভেঙে দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীদের কাছে তা বড় ঘটনাই হবে। অ্যালফাবেট বৃহৎ এক কোম্পানি; এই কোম্পানির বাজার মূলধন দুই ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি, আর তার ব্যবসার মূল হাতিয়ার হচ্ছে গুগল। বিশ্বের খুব কম মানুষ ও কোম্পানি আছে, যারা কোনো না কোনোভাবে গুগলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এই কোম্পানি কীভাবে ভেঙে দেওয়া হবে এবং এরপর তারা মুনাফা ধরে রাখতে পারবে কি না এবং বাজারে তার বড় প্রভাব পড়বে কি না, এসব প্রশ্ন উঠেছে। তার চেয়ে বড় কথা, সারা পৃথিবীতে এখন যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে, তাতে পরিবর্তন আসবে। দেখে নেওয়া যাক, গুগল ভেঙে দেওয়া হলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিচালনায় কী পরিবর্তন আসবে।
প্রথমত, গুগল ভেঙে গেলে বিজ্ঞাপনের ব্যয় কমে যাবে। অনলাইন বিজ্ঞাপন জগতে গুগলের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে বিজ্ঞাপনের ব্যয় বেড়ে গেছে। সে কারণে ছোট ছোট কোম্পানিগুলোর পক্ষে বাজারে প্রভাব ফেলা কঠিন। বাজার বিশ্লেষকেরা বলেন, এই ধরনের পরিস্থিতির কারণে বড় ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো বাজারে অন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে; অন্যদিকে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো বাজারে যথাযথ গুরুত্ব পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে অনলাইন বিজ্ঞাপনের জগতে প্রতিযোগিতা বাড়লে ব্যয় কমবে; তখন বাজার আরও অনেক উন্মুক্ত হবে, কোম্পানিগুলোর হাতে অনেক বিকল্প আসবে। তবে এ কারণে গ্রাহকদের কী সুবিধা হবে, তা এখনো বলা মুশকিল।
দ্বিতীয়ত, অ্যাপের জগতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে মানুষ অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করে। ফলে গুগল ভেঙে গেলে অ্যাপের জগতে গুগলের যে প্রাধান্য, তা–ও ভেঙে যাবে। অ্যাপের জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেম। আমরা কোন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারব আর কোন অ্যাপ পারব না, তা মূলত এই দুটি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং অ্যাপল ভেঙে দেওয়া হলে আরও অনেক নতুন অ্যাপ বাজারে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তখন গ্রাহকদের হাতে আরও অনেক বিকল্প আসবে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি হবে। ঠিক এ কারণেই ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা মনে করেন, গুগল ভেঙে দেওয়া দরকার। সেটা হলে স্থবির হয়ে পড়া এই শিল্পে গতি আসবে। এটা ঠিক, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ইতিহাসে গুগল অন্যতম সফল এক নাম; অথচ সে প্রতিষ্ঠান নিজেই এখন স্টার্টআপগুলোর জন্য প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গুগল ভেঙে দেওয়া হলে ডিজিটাল জগতে ব্যবসার ব্যয় কমে যাবে এবং তার হাত ধরে আরও অনেক উদ্ভাবন ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি হবে। অনেকেই মনে করেন, ইন্টারনেট এখন সর্বব্যাপক; কিন্তু ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, বৈশ্বিক জিডিপির মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ আসে ইন্টারনেট থেকে। সুতরাং এখানে প্রবৃদ্ধির আরও সুযোগ আছে; আগামী এক দশকে বৈশ্বিক জিডিপিতে ইন্টারনেটের হিস্যা ১০ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গুগলের মতো বড় কোম্পানি ভেঙে দেওয়া অনুঘটকের কাজ করতে পারে।
তবে গুগল কীভাবে ভেঙে দেওয়া হবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এমনও হতে পারে যে ক্রোম ওয়েব ব্রাউজার ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম থেকে গুগলকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিতে হবে বা কমাতে হবে। আবার সার্চ ইঞ্জিনকে পৃথক একটি কোম্পানি হিসেবে গঠন করতেও বাধ্য হতে পারে তারা; অন্যান্য কার্যক্রম থেকে যা পৃথকভাবে পরিচালিত হবে। অথবা এমনও হতে পারে যে গুগলকে তার বিজ্ঞাপন ব্যবসা আলাদা করে ফেলতে হবে অথবা কীভাবে তারা বিজ্ঞাপনের দর নির্ধারণ করে, তার ওপর নজরদারি মেনে নিতে হবে। যা–ই হোক না কেন, গুগল যদি শেষমেশ ভেঙে যায়, তাহলে তাদের বিপণন ও পণ্য তৈরির কৌশলে নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।
পরিবর্তন যদি ঘটে, তা যেন ভালোর জন্যই ঘটে। এর সাধারণ একটি কারণ হলো, যত বেশি প্রতিযোগিতা, তত সুবিধা। কিন্তু এ প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ ও বিশৃঙ্খল। এই পথপরিক্রমায় অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
একচেটিয়াতন্ত্রের অভিযোগ কেবল গুগলের বিরুদ্ধে নয়, অন্যান্য বৃহৎ কোম্পানির বিরুদ্ধেও আছে। চলতি বছর বৃহৎ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যাপলের বিরুদ্ধেও স্মার্টফোনের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখা ও বাজার থেকে প্রতিযোগীদের হটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
গত কয়েক বছরে ইন্টারনেটের জগতে গুগলের প্রাধান্য অবশ্য কিছুটা খর্ব হয়েছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক চ্যাটজিপিটি আসার পর গুগলের প্রাধান্য কিছুটা কমেছে। এই প্রতিযোগিতায় গুগল কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। তবে বিজ্ঞাপনের ব্যবসা দিয়ে সেই ক্ষতি তারা কাটাতে পারছে। কিন্তু আদালতের রায়ের পর গুগল সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে।
Source : Money  Week

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us