সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ব্যর্থতার পর ২০২৩ সালে প্রযুক্তি ব্যয় ও প্রকল্পে বিনিয়োগ একেবারে কমিয়ে এনেছিল বহুজাতিক ব্যাংকগুলো। সম্প্রতি আবারো এ খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে তারা। এতে ভারতের ২৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে আরো সম্প্রসারণের সম্ভাবনা হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে আয়ের এক-তৃতীয়াংশ আসে ব্যাংক, আর্থিক পরিষেবা ও ইন্স্যুরেন্স (বিএফএসআই) গ্রাহকদের থেকে। বৈশ্বিক ব্যাংকগুলোর আইটি খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় এ আয় আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের।
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) ছিল প্রযুক্তি উদ্যোগগুলোয় বিনয়োগকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালে দেউলিয়াত্বের মুখে পড়ে ব্যাংকটি। এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ব্যয় কমিয়ে দেন বিএফএসআই গ্রাহকরা। তবে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো ভারতীয় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, টানা ছয় প্রান্তিকের মন্দার পর ধীরে ধীরে বিএফএসআই গ্রাহকদের ব্যয় বাড়ছে। ফলে আইটি খাতে আশার সঞ্চার হয়েছে।
টিসিএসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সামির সেকসারিয়া বলেন, ‘বিএফএসআই ভোক্তাদের দ্রুত বিনিয়োগে ফিরে আসা উচিত। কেননা এসভিবির পতনের পর তারাই প্রথম সতকর্তা অবলম্বন করেছিলেন।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদহার কমানো ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলেও মনে করেন সামির সেকসারিয়া।
জেপি মরগান চেজ ও ব্যাংক অব আমেরিকার মতো বড় ব্যাংকগুলো সম্প্রতি প্রযুক্তি খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও বৈঠকেও ব্যয় বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামগ্রিক প্রযুক্তি খাতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জেপি মরগান চেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছর প্রযুক্তি খাতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় ১৫০ কোটি ডলার বেড়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে। অন্যদিকে ব্যাংক অব আমেরিকা বলছে, এ বছর নতুন প্রযুক্তি উদ্যোগগুলোর জন্য ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে তারা। এর মাধ্যমে সৃজনশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (জেনারেটিভ এআই) প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রসার করতে চায় মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
প্রযুক্তি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এভারেস্ট গ্রুপের সিইও পিটার বেন্ডর-স্যামুয়েল বলেন, ‘ব্যাংক খাতে প্রযুক্তি ব্যয় বৃদ্ধি প্রযুক্তি পরিষেবা শিল্পের জন্য আশাব্যঞ্জক। কেননা অতীতে অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি এ খাতকে অনুসরণ করে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।’
রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জুন শেষ হওয়া প্রান্তিকে শীর্ষ পাঁচ মার্কিন ব্যাংক প্রযুক্তি খাতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আগের প্রান্তিকের তুলনায় এ সময় বিনিয়োগ বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রযুক্তি খাতে তাদের নতুন বিনিয়োগগুলোয় মূলত আইনি বাধ্যবাধকতা অনুসরণ, গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা ও সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হবে। পাশাপাশি নিজস্ব অবকাঠামো ছাড়াও ক্লাউডভিত্তিক প্লাটফর্ম স্থাপন ও ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হবে। এতে কর্মপরিবেশ উন্নতির সঙ্গে পরিষেবার মানও বাড়বে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রসঙ্গত, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সেপ্টেম্বর নাগাদ সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে আনতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে ঋণ গ্রহণের ব্যয় কমে যাবে, যা আইটি খাতেও বিনিয়োগ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। (খবরঃ বিজনেস রেকর্ডার)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন