চীনে ভূরাজনীতি ও নিয়ন্ত্রণ জটিলতায় প্রাইভেট ইকুইটিতে অনাগ্রহ বেড়েছে – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন

চীনে ভূরাজনীতি ও নিয়ন্ত্রণ জটিলতায় প্রাইভেট ইকুইটিতে অনাগ্রহ বেড়েছে

  • ২৬/০৮/২০২৪

বিনিয়োগের দিক থেকে একসময় চীন আকর্ষণীয় বাজার বিবেচিত হলেও বর্তমানে তাতে খানিকটা ভাটা পড়েছে। এর পেছনে দুই ধরনের কারণ দেখছেন বিশ্লেষকরা। একদিকে রয়েছে চলমান ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন, যেখানে একাধিক দেশের সঙ্গে চীনের রয়েছে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার সম্পর্ক। অন্যদিকে বেইজিংও ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছে। এ কারণে ব্ল্যাকস্টোন, কেকেআর ও কার্লাইলের মতো শীর্ষ প্রাইভেট ইকুইটি (পিই) সংস্থাগুলো চীনে ব্যবসায়িক চুক্তির ক্ষেত্রে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে এক প্রতিবেদেন উল্লেখ করেছে এফটি।
চলতি বছরের বিনিয়োগ পরিসংখ্যান থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির প্রতি পিই সংস্থাগুলোর অনাগ্রহ স্পষ্ট। সেখানে বড় ধরনের মন্থরতা দেখা যাচ্ছে। চীনে একসময় বড় বিনিয়োগ করেছে এমন শীর্ষ ১০ ইকুইটি ও বাইআউট ফার্ম এ সময়ে মাত্র পাঁচটি নতুন চুক্তি করেছে, অর্থের অংকে যার বেশির ভাগই ছোট।
আর্থিক বাজারবিষয়ক প্লাটফর্ম ডিয়ালজিকের তথ্যানুসারে, উল্লেখিত ১০ সংস্থা সম্মিলিতভাবে ২০২১ সালে চীনে ৩০টি বিনিয়োগ চুক্তি করেছিল, আগের বছরগুলোয়ও চুক্তির সংখ্যা ছিল এর কাছাকাছি। এরপর থেকে প্রতি বছর নতুন চুক্তি কমেছে। এ বছর ১০টির মধ্যে সাত সংস্থাই নতুন কোনো বিনিয়োগ করেনি।
এ বিষয়ে অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের কো-হেড খের শেং লি বলেন, ‘ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, নিয়ন্ত্রক অনিশ্চয়তা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা থাকায় চীন বিনিয়োগকারীদের জন্য রোলার কোস্টারে পরিণত হয়েছে।’
একসময় দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে চীন ছিল স্বর্ণ খনির মতো। কিন্তু বর্তমানে সেখানে আতশি কাচ ও চিমটা দিয়ে স্বর্ণ খোঁজার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলেও জানান খের শেং লি।
চীনা সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে সম্প্রসারণ ঘটবে, এক দশক আগেও এমন ধারণা পোষণ করতেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। তারা ভাবতেন কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে মুনাফার হার ক্রম বাড়বে। কিন্তু ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় বেশকিছু সমস্যায় পড়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ দিদি চুক্সিং। এরপর থেকে বিদেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর কঠোর হয়েছে চীন। ফলে যে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন আইপিওর মাধ্যমে কেনা চীনা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে নগদ অর্থ আশা করেছিলেন, তারা সে সুযোগ কমই পেয়েছেন।
চীনে বিনিয়োগ পরিস্থিতি একই সময়ে একাধিক কারণে প্রভাবিত হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর পর নানা ধরনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি এখনো বেশ শ্লথ। একই সময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় চীনা প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না পিই ফার্মগুলো। আবার বিদেশে বিনিয়োগজনিত নীতি কঠোর করায় ব্যবসায়িক পরিবেশ প্রভাবিত হয়েছে বলে জানান পরামর্শক সংস্থা এশিয়া গ্রুপের চীনের কান্ট্রি ডিরেক্টর হ্যান লিন।
গত এক দশকে চীনে সক্রিয় থাকা অন্যতম মার্কিন পিই ফার্ম ওয়ারবার্গ পিনকাস। একসময় অ্যান্ট গ্রুপ ও ক্ল্যাসিফায়েড সাইট ফিফটি এইট ডটকমের অংশীদারত্ব কিনেছিল কোম্পানিটি। কিন্তু চলতি বছরে একটিও নতুন চুক্তি করেনি। ২০২২ ও ২০২৩ সালে দুটি করে চুক্তি করেছিল কোম্পানিটি। অথচ ২০১৭ ও ২০১৮ সালে চীনে ওয়ারবার্গ পিনকাসের নতুন বিনিয়োগ চুক্তি ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ১৫টি।
একটি সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে অংশীদারত্ব বাড়ানোর ছোট চুক্তির প্রস্তাব বাদ দিলে ব্ল্যাকস্টোন কোনো চুক্তি করেনি। একসময় চীনে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টিফেন শোয়ার্জম্যান ছিলেন সুপরিচিত বিদেশী ডিলমেকার। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে নতুন কোনো প্রাইভেট ইকুইটি চুক্তি করেননি তিনি।
সুদহার রেকর্ড উচ্চতায় থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বেই ঋণনির্ভর চুক্তি কম হচ্ছে। এছাড়া প্রভাব ফেলেছে ভোক্তা চাহিদা পতন। কিন্তু শীর্ষ ১০ কোম্পানির কর্মকাণ্ড তুলনা করলে বাকি বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে চীন। কারণ এখানে প্রাইভেট ইকুইটি চুক্তি অন্য অঞ্চলের তুলনায় তীব্রভাবে কমেছে।
ব্ল্যাকস্টোনের চুক্তিটি বাদ দিলে উল্লেখিত ১০ কোম্পানির মধ্যে একমাত্র অ্যাডভেন্ট অ্যান্ড ভেইন চীনে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। সংস্থাটি সাংহাইভিত্তিক কনফারেন্স ও প্রদর্শনীকেন্দ্রিক গোষ্ঠী ভিএনইউ এক্সিবিউশন এশিয়া এবং পোষাপ্রাণীর খাদ্য উৎপাদন সিক পেট ফুডে বিনিয়োগ করছে। এছাড়া বাকি পাঁচটি চুক্তির মধ্যে দুটি করেছে বেইনের অংশীদারত্ব আছে এমন প্যাকেজিং প্রডাক্টস গ্রুপ ফেড্রিগোনি।
বেইনের একজন মুখপাত্র জানান, চীনে তাদের আগ্রহের খাতগুলোয় এখনো ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পোৎপাদন, নবায়নযোগ্য খাত ও ভোক্তা পরিষেবা। তবে চীনে বিনিয়োগ সম্পর্কে অন্য সংস্থাগুলো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এক পদক্ষেপ চীনে বিদেশী বিনিয়োগের আগ্রহকে ধাক্কা দেয়। কেননা প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো আকর্ষণীয় বলে বিবেচিত হয়। ওই সময় জো বাইডেন চীনা সামরিক বাহিনীতে মার্কিন পুঁজি ও বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রবাহ কমানোর উদ্যোগ নেন। সে লক্ষ্যে দেশটিতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, হালনাগাদ চিপস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে মার্কিন বিনিয়োগ সীমিত করার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন।
Source : Reuters

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us