যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বর নাগাদ সুদহার কমাতে প্রস্তুত ফেডারেল রিজার্ভ। মার্কিন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান জেরোমে পাওয়েল সম্প্রতি বলেছেন, ‘সুদহার কমানোর সময় হয়ে এসেছে।’ মূল্যস্ফীতির কাঙ্ক্ষিত গতি ও শ্রমবাজারের নিম্নমুখী ঝুঁকি এতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি ওয়াইমিংয়ের জ্যাকসন হোলের এক সম্মেলনে জেরোমে পাওয়েল জানান, ফেডের আর্থিক নীতিগুলো পরিস্থিতি অনুসারে সমন্বয়ের সময় এসেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অভিমুখ পরিষ্কার। প্রাপ্ত তথ্য, এর থেকে পাওয়া পর্যবেক্ষণ ও ঝুঁকির ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করবে কখন ও কী হারে সুদহার কমবে।
সুদহার কাটছাঁট নিয়ে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা জোরালো পূর্বাভাস দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির ট্রেজারি বন্ড ও ডলারের বিনিময় হারে। সম্প্রতি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের দাম বেড়ে গেছে ও ডলারের বিনিময় হারে পতন ঘটেছে।
মূলত স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য সামনে রেখে সুদহার সর্বোচ্চ স্তরে ধরে রেখেছে ফেড। জুলাইয়ের কর্মসংস্থানের নেতিবাচক প্রবণতাও সুদহার কমানোকে প্রভাবিত করছে। ২৩ আগস্টের ওই সম্মেলনে জেরোমে পাওয়েল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রগতির সঙ্গে একটি শক্তিশালী শ্রমবাজারের জন্য যা কিছু দরকার আমরা তা করব।’ এছাড়া পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন।
কানসাস সিটি ফেডের বার্ষিক সম্মেলনে করা এসব মন্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই সুদহার কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আগামী নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর ছয় সপ্তাহ আগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ফেডের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সুদহার কমানোর পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেবে কমিটি। মার্কিন ভোটারদের কাছে এখন প্রধান উদ্বেগের বিষয় অর্থনীতির গতি, মূল্যস্ফীতি ও ঋণ বাবদ উচ্চ খরচ। এ পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এদিকে সুদহার কমার পূর্বাভাসের প্রতিফলিত হচ্ছে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে। এসব বন্ডে সুদ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রাগুলোর তুলনায় ডলারের বিনিময় হার দশমিক ৭ কমেছে। পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর সূচক দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা জুলাইয়ের সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এসব কিছুর অর্থ হলো, বাজারে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন।
জেরোমে পাওয়েলের বক্তব্যের পর দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্টে সুদহার কমানোর প্রত্যাশা বেড়েছে বাজারে। আগে এক জরিপে এ সম্ভাবনার পক্ষে ছিল ২৮ শতাংশ মতামত, কিন্তু জেরোমে পাওয়েলের বক্তব্যের পর তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশে।
এদিকে কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটের আগে সুদহার না কমাতে সতর্ক করে দেন। উল্টো দিকে কিছু অর্থনীতিবিদ ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা ফেডের সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে ফেডের ধীর চলার নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
মহামারী-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে হাজির হয়েছে মূল্যস্ফীতি। মূলত মূল্যস্ফীতির লাগাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশির ভাগ শীর্ষ অর্থনীতি রেকর্ড উচ্চতায় সুদহার স্থির রেখেছিল। লম্বা সময় ধরে সুদহার বেশি থাকায় দেশগুলোর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। গত জুনে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমানতের ওপর সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি)। এছাড়া পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর অঞ্চলটির সুদহারে দশমিক ২৫ শতাংশীয় হারে দুটি অতিরিক্ত কাটছাঁট আসতে পারে। এছাড়া আগস্টে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদহার কমিয়েছে। তবে গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি ধারাবাহিক কাটছাঁটের কথা অস্বীকার করেছেন।
ফেড চেয়ারম্যান সাম্প্রতিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ বছরের শুরুতে অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়লেও সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফেডের ২ শতাংশ লক্ষ্যের দিকে মূল্যস্ফীতি ফিরে আসার গতি দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করেছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ও শ্রমবাজারের ভারসাম্য সে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বলে মন্তব্য ফেডের। অবশ্য মার্কিন অর্থনীতিতে এখনো নতুন চাকরি কম এবং বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছে গেছে।
এদিকে ফেডের কিছু কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন, দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্টের বদলে তারা দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্টে ধীরে ধীরে সুদহার কমানো বিবেচনায় রাখছেন। তবে শ্রমবাজার নাটকীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে বড় কাটছাঁট আসতে পারে। (খবরঃ এফটি)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন