ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় গত কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা বাড়ছে। পরিবেশগত এ বিপর্যয় মোকাবেলায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশগুলো। ফলে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে এ অঞ্চলে এলএনজির আমদানি বাড়ছে।
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এলএসইজি) তথ্যানুযায়ী, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ২০২৩ সালে এলএনজি আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। ওই বছর এ অঞ্চলে মোট ৩ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করা হয়। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এলএনজি আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার টন। বছরের বাকি সময়ে আমদানি আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত জুলাইয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় এলএনজি আমদানি হয়েছে ৩৫ লাখ ১০ হাজার টন, যা মাসিক ভিত্তিতে ২০২১ সালের শরৎকালের পর ইউরোপের তুলনায় বেশি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০২৩ সালে এলএনজি আমদানি ২৬ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ২ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টন হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাইয়ে এ অঞ্চলে এলএনজি আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।
ভারত ছাড়াও থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলএনজি আমদানি করে। ২০২৩ সালে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। ফলে এশিয়ার এলএনজি চাহিদা আরো বেড়েছে। এছাড়া তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দামের কারণেও এ অঞ্চলে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বাড়ছে। এলএসইজির তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে এশিয়ায় এলএনজির সাপ্তাহিক স্পট দাম প্রতি এমবিটিইউ ৩৫ ডলার ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ১৪ ডলারে। চলতি মাসের শুরুতে দাম ছিল প্রায় ১১ ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের তুলনায় এখনো কম থাকলেও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কিছুটা বেড়ে ১২ দশমিক ৯ ডলার হয়েছে। উন্নত দেশের তুলনায় ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এলএনজির চাহিদা নির্ধারণে দামের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে।
এশিয়ায় তাপমাত্রা বাড়ায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। ভারতের নয়াদিল্লিতে গত মে মাসে তাপমাত্রা রেকর্ড ৫২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ফিলিপাইনসের রাজধানী ম্যানিলা ও মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলেও এপ্রিলের শেষের দিকে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা গেছে।
ফলে এলএনজির ব্যবহারকে পরিবেশ দূষণ কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা প্রাকৃতিক গ্যাস কয়লার তুলনায় প্রায় অর্ধেক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে। তাছাড়া বিশ্বের জ্বালানি রূপান্তরের একে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। একই লক্ষ্যমাত্রা ইন্দোনেশিয়া ২০৬০ সাল, থাইল্যান্ড ২০৬৫ সাল ও ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে অর্জন করতে চায়। দেশগুলো জ্বালানির বাড়তি চাহিদা এবং কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে।
এদিকে ইউরোপে এলএনজি আমদানি জানুয়ারি-জুলাইয়ে ২৪ শতাংশ কমে ৩ কোটি ২২ লাখ ২৮ হাজার টনে নেমে এসেছে। অঞ্চলটিতে গত ফেব্রুয়ারির পর প্রতি মাসেই এলএনজি আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউরোপে পাইপলাইনে এলএনজি রফতানি কমিয়ে দেয় রাশিয়া। তখন বিকল্প উৎস থেকে এলএনজি কেনার কারণে ইউরোপে জ্বালানিটির আমদানি ৬ কোটি ৫২ লাখ ২৮ হাজার টনে উন্নীত হয়, যা আগের বছরের দ্বিগুণ। ২০২৩ সালে তা আরো বেড়ে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫ হাজার টনে পৌঁছে। শিল্প সংস্থা গ্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইউরোপের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাইয়ের শেষে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রায় ৮৫ শতাংশ গ্যাস মজুদাগার পূর্ণ ছিল। ফলে মজুদ বাড়ায় সেখানে এলএনজির চাহিদা কমছে। (খবরঃ নিক্কেইএশিয়া)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন