বর্তমান সময়কে প্রযুক্তির নিরিখে ব্যাখ্যা করলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই থাকবে তালিকার শীর্ষে। তবে এ প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ও অতিনির্ভরতা নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে ফরচুন ৫০০ কোম্পানিগুলোয়। এক বছরের ব্যবধানে আশঙ্কা জানানো কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে ছয় গুণ। একই সঙ্গে উদীয়মান প্রযুক্তি কীভাবে শিল্প খাতের রূপান্তরে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সে চিত্রও উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
ফরচুন ৫০০ হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরচুন সাময়িকী সংকলিত বার্ষিক তালিকা। যেখানে নিজ নিজ অর্থবছরে আয়ের ভিত্তিতে দেশটির বৃহত্তম করপোরেশনগুলোকে স্থান দেয়া হয়।
গবেষণা প্লাটফর্ম অ্যারিজে এআই সাধারণত বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্মুক্ত প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে জরিপ করে থাকে। তাদের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ফরচুন ৫০০ কোম্পানির মধ্যে ৫৬ শতাংশই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সম্ভাব্য ‘ঝুঁকির কারণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংখ্যাটি ২০২২ সালে ৯ শতাংশ থেকে বড় একটি উল্লম্ফন, যা এআই নিয়ে ক্রমবর্ধমান আশঙ্কাকে তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১০৮টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৩৩টি বিশেষভাবে মানুষের মতো পড়তে ও বাস্তবসম্মত চিত্র তৈরিতে সক্ষম প্রযুক্তি জেনারেটিভ এআই নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা খাতটিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে বলে জানিয়েছে। এ কোম্পানিগুলো বার্ষিক প্রতিবেদনে জেনারেটিভ এআইয়ের সম্ভাব্য সুবিধার মধ্যে সাশ্রয়ী খরচ, পরিচালনগত সুবিধা ও নতুন উদ্ভাবনে দ্রুত অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করেছে। তবে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কোম্পানি এ প্রযুক্তিকে ঝুঁকি হিসেবেই দেখছে।
প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এরই মধ্যে জেনারেটিভ এআইয়ের প্রভাব বিভিন্ন শিল্প খাত ও যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে উন্মুক্ত হয় ওপেনআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি, যা রাতারাতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর থেকে এ ধরনের মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির চাহিদা ও উদ্ভাবন বেড়ে চলেছে। নতুন সুযোগ কাজে লাগাতে বড় কোম্পানিগুলো শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিকাশে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, চালু হয়েছে শত শত নতুন স্টার্টআপ।
ফরচুন ৫০০ কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে এআই ঝুঁকির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বৃহত্তর প্রতিযোগিতার আশঙ্কা। কোম্পানিগুলো বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বীরা এআইয়ের ব্যবহারে এগিয়ে থাকলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সম্ভাব্য অন্য ক্ষতির মধ্যে রয়েছে কোম্পানির সুনাম বা পরিচালনগত সমস্যা। নৈতিক সংকটও বড় হয়ে সামনে এসেছে। মানবাধিকার, কর্মসংস্থান ও গোপনীয়তার ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোম্পানির কর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গণমাধ্যম ও বিনোদন নির্ভর কোম্পানির ৯০ শতাংশেরও বেশি বলছে, দ্রুত বর্ধনশীল এআই প্রযুক্তি ২০২৩ সালে ব্যবসায়িক ঝুঁকি হিসেবে কাজ করেছে, ৮৬ শতাংশ সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলোরও একই মত।
ফরচুন ৫০০-তে অন্তর্ভুক্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানির দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক পরিষেবা, খুচরা, ভোক্তা ও মহাকাশ সংস্থার অর্ধেকেরও বেশি বিনিয়োগকারী একই সতর্কবার্তা দিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে ২৯ হাজার কোটি ডলারের স্ট্রিমিং পরিষেবা নেটফ্লিক্সের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করা যায়। কোম্পানিটি সতর্ক করে বলেছে, প্রতিযোগীরা এআই ব্যবহারের মাধ্যমে স্ট্রিমিং খাতে বিশেষ সুবিধা করে নিতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্ভাবন নেটফ্লিক্সের প্রতিযোগিতার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে কোম্পানির জন্য নেতিবাচক রূপ নিতে পারে।
টেলিকম গ্রুপ মটোরোলা বলেছে, যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এআই সবসময় সে অনুযায়ী কাজ নাও করতে পারে। যে ধরনের ডাটা ব্যবহার করা হয় তাতে অপর্যাপ্ত বা অবৈধ, পক্ষপাতদুষ্ট, ক্ষতিকারক বা আপত্তিকর তথ্য থাকতে পারে, যা কোম্পানির আয় ও খ্যাতিকে পেছন দিকে ঠেলে দিতে পারে।
কিছু কোম্পানি এআইয়ের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে অপ্রত্যাশিত খরচ যুক্ত হতে পারে।
আইনি, নিয়ন্ত্রক ও সাইবার নিরাপত্তায় এআইয়ের ঝুঁকিগুলো ফরচুন ৫০০ কোম্পানির আলোচনায় একটি সাধারণ বিষয় ছিল। বিনোদন জায়ান্ট ডিজনি সতর্ক করে বলেছে, জেনারেটিভ এআইয়ের মতো নতুন প্রযুক্তির বিকাশ নিয়ন্ত্রণের নিয়মগুলো এক জায়গায় স্থির থাকে না। আরো বলা হচ্ছে, মেধাস্বত্বের কারণে এর ব্যবহার বিদ্যমান ব্যবসায়িক মডেলকে আঘাত করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সম্ভাব্য সুবিধা হিসেবে দাবি করা কয়েকটি সংস্থার মধ্যে ছিল স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি কোয়েস্ট ডায়াগনস্টিকস ও সিগনা। তারা বলছে, জেনারেটিভ এআই ব্যবসার কিছু ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রাহক পরিষেবা, নমুনা প্রক্রিয়াকরণ ও তথ্য বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞাপনের যথাযথ ব্যবহার। (খবরঃ এফটি)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন