প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। গত শুক্রবার নর্থ ক্যারোলিনার রলি শহরে নির্বাচনী প্রচারণায় এ কথা জানান তিনি। এটি একটি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য, যেখানে তিনি ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নভেম্বরের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কমলা বলেন, দেশের মধ্যবিত্তদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘অপরচুনিটি ইকোনমি’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সুবিধা দেয়া হবে। মধ্যবিত্তরা দেশ গঠনে অন্যতম শক্তিশালী অবদান রাখবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অপরচুনিটি ইকোনমি কয়েকটি ভিত্তির ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। ভিত্তিগুলোর মধ্যে দেশের সব শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন নিশ্চিত করার কথা জানান তিনি। অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সব ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে।
কমলা বলেন, কভিড-১৯ মহামারির সময়ে দেশের সরবরাহ ব্যবস্থায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও বাসস্থানের ব্যয় অনেকটাই কমে আসবে। ট্রাম্পের সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা এবং পণ্যের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করে হ্যারিস বলেন, বড় বড় করপোরেশনকে সুবিধা দিয়ে ছোট প্রতিষ্ঠান গুলোকে বিপর্যস্ত করেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বে দেশের কর্মসংস্থান সংকট দূর হয়েছে দাবি করে কমলা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত এক সপ্তাহে মূল্যস্ফীতির হার তিন শতাংশের নিচে নেমে যাওয়াকে অভিনব সাফল্য বলে উল্লেখ করে কমলা জানান, আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবেন।
খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ওপর ফেডারেল নিষেধাজ্ঞা এবং প্রথমবার বাড়ির মালিক হতে যাওয়া নাগরিকদের জন্য ডাউন পেমেন্ট সহায়তায় ২৫ হাজার ডলার সহায়তা পরিকল্পনা প্রকাশ করতে যাচ্ছেন কমলা।
ভোটারদের প্রধান উদ্বেগ ক্রমবর্ধমান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও আবাসন মূল্য। এসব সমস্যা মোকাবিলায় অর্থনীতির ওপর আলোকপাত করে তার প্রথম বক্তৃতায় গত শুক্রবার হ্যারিস তার প্রস্তাবের রূপরেখা তুলে ধরেন। হ্যারিসের প্রচারণা বলছে, তার লক্ষ্য, বড় করপোরেশন গুলো অত্যধিক করপোরেট মুনাফার জন্য ভোক্তাদের যাতে অন্যায়ভাবে শোষণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ওপর তাদের নজর থাকবে। প্রতিযোগিতার অভাবে এ খাতের মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের উপার্জন কমিয়ে দেয় এবং দাম বাড়ায়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প কমলা হ্যারিসের প্রস্তাবকে ‘কমিউনিস্ট মূল্য নিয়ন্ত্রণ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এগুলো কার্যকর নয়, এগুলোর আসলে ঠিক বিপরীত ফল ও প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে খাদ্যঘাটতি, রেশনিং, ক্ষুধাসহ নাটকীয়ভাবে আরও মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড স্বাধীনভাবে সুদের হার নির্ধারণ করে এবং প্রেসিডেনশিয়াল নীতিগুলো মূল্য কমানোর ওপর অন্তত স্বল্প মেয়াদে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না বলে ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাইপার্টিসান পলিসি সেন্টারের ইকোনমিক পলিসি প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক অ্যান্ড্র– লাউজ বলেন, কোনো প্রেসিডেন্টের প্রবর্তিত একক কোনো নীতি মূল্যস্ফীতিকে বর্তমান স্তর থেকে অর্থনীতির জন্য ফেডারেল রিজার্ভের দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা দুই শতাংশে নামিয়ে আনতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
ট্রাম্প বলেন, তিনি তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। লাউজ ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, জ্বালানি সরবরাহ বাড়ালে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়তে পারে, কিন্তু তা সহসা হওয়ার নয়।
Source : Voice Of America
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন