সৌদি আরবের অর্থনীতিতে জ্বালানি তেলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও আগামী বছরগুলোয় এ খাতে খরচ কমাবে দেশটি। অন্যদিকে ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি তেলবহির্ভূত বৈচিত্র্যময় খাতে ১ ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে। মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, এর আগে জ্বালানি তেলে মনোযোগ থাকলেও এখন টেকসই অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় অন্য খাতগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে রিয়াদে।
অগ্রাধিকারের এ পরিবর্তনকে ‘কেপেক্স সুপার-সাইকেল’ বলে অভিহিত করেছে মার্কিন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটি। এটি এমন এক প্রবণতা যেখানে দীর্ঘমেয়াদি বড় ব্যয়ের প্রকল্পে নতুন প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক পরিবর্তন গুরুত্ব পেয়ে থাকে। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, আরব বিশ্বের বৃহত্তম এ অর্থনীতি জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে বিনিয়োগ তহবিলের প্রায় ৭৩ শতাংশ খরচ করতে পারে। এর আগে এ খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য হার ছিল ৬৬ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে রিয়াদের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি, যা ২০৩০ সাল নাগাদ ৪ হাজার কোটি ডলার কমে ২৮ হাজার কোটি ডলারে নেমে আসতে পারে। এতে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিশোধন দুই-ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগের প্রতিবেদন অনুসারে, জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলনে সৌদি আরব ২৩-২৬ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে পারে। নতুন প্রতিবেদনে গোল্ডম্যান স্যাকস সংশোধন করে জানিয়েছে, এ খাতে বিনিয়োগ কমে ১৯ হাজার কোটি থেকে ২২ হাজার কোটি ডলারে নামতে পারে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ইকুইটি গবেষণা বিভাগের প্রধান ফয়সাল আল আজমেহ এ প্রতিবেদনে বলেন, ‘সৌদি আরবের ডিকার্বনাইজেশন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈচিত্র্যকরণ পরিকল্পনার মূল অবদানকারী হিসেবে থাকবে প্রাকৃতিক গ্যাস।’
এ সময় ক্লিন এনার্জি খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে সৌদি আরব। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ক্লিন হাইড্রোজেন ও কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আগে এসব খাতে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পূর্বাভাস দেয়া হলেও এবার প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে।
সম্প্রতি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করেছে সৌদি আরব। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকটির দেয়া তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ১১ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে রিয়াদ। এছাড়া বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ দশমিক ৭ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে। অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ কর্মসূচির অধীনে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একাধিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। বিশেষ করে ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাতে নেয়া গিগা প্রকল্পগুলোয় আরো প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আনতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে বিনিয়োগ আইনকে হালনাগাদ করেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বৈশ্বিক নিম্ন কার্বন রূপান্তরের লক্ষ্যের সঙ্গে একমত ওপেকের বৃহত্তম তেল রফতানিকারক সৌদি আরব। ২০২১ সালে দেশটি জানিয়েছিল, ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণে নিরপেক্ষতা অর্জন করবে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদন অনুসারে, সামনে সৌদি অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের প্রধান খাত হয়ে উঠবে ধাতব ও খনি শিল্প, ডিজিটালাইজেশন এবং পরিবহন ও লজিস্টিকস। ২০৩০ সাল নাগাদ তিন খাতে যথাক্রমে ১৭ হাজার কোটি, ১৬ হাজার ৪০০ কোটি ও ২০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে।
সৌদি আরব এরই মধ্যে বৈশ্বিক লজিস্টিক হাব ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন খাতে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তবে গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, বড় অংকের পরিকল্পনা নিলেও কাজটি সহজ হবে না। কেননা এখন পর্যন্ত বছরে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল সংকট দেখা যাচ্ছে। এজন্য অর্থায়নের বিকল্প উৎস সন্ধান করতে হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম ৮০-৮৫ ডলারের মধ্যে থাকায় ও উত্তোলন প্রতিদিন ৯০ লাখ ব্যারেলে নেমে যাওয়ায় সৌদি সরকারের বাজেটের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে, যা গত বছরের ২ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। ঘাটতির প্রায় ২ দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্টের কারণ হলো খরচ বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেল কম আয়। তাই উচ্চ বাজেট ঘাটতি সৌদি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে কিছুটা অনিশ্চয়তা দিয়েছে।
Source : The National
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন