বিদেশীদের জন্য বিভিন্ন দেশে আলাদা কর আইন রয়েছে, যা মূলত ওইসব দেশে অবস্থানকাল ও কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে ধার্য হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে বড় অংকের বিনিয়োগের কারণে তারা বিভিন্ন ধরনের সুবিধাও পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি ট্যাক্স রেসিডেন্ট বা ফিসক্যাল রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত এ ধরনের বাসিন্দাদের ওপর বার্ষিক ফিক্সড ট্যাক্সের হার দ্বিগুণ করেছে ইতালি সরকার। তাদের জন্য নির্ধারিত ১ লাখ ইউরো থেকে কর বেড়ে এখন হয়েছে ২ লাখ ইউরো।
পুরনো ফিক্সড ট্যাক্স নীতি নিয়ে অনেকদিন ধরে সমালোচনা করে আসছিলেন ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। বার্ষিক ফি কম হওয়ায় বিদেশী অনেকেই স্থানীয় আবাসনে বিনিয়োগ করছিলেন বা ফ্ল্যাট কিনছিলেন। এতে আবাসিক খাতে ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইতালি সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনানুষ্ঠানিক ভাবে নীতিটিকে বলা হয়ে আসছে ‘বিলিয়নেয়ার্স ট্যাক্স’ বা ‘ফুটবলার্স স্কিম’। যে নামেই ডাকা হোক না কেন বিলিয়নেয়ারদের টার্গেট করে নেয়া নীতিটির মাধ্যমে বেশ ভালো অংকের আয় হয় দেশটির।
ফুটবলার্স স্কিম নামে ডাকার একটি বড় কারণ হতে পারে পর্তুগিজ ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ২০১৮ সালে দেশটির তুরিন শহরে পাড়ি জমান তিনি। রোনালদো ফিক্সড ট্যাক্স পদ্ধতির কারণে উপকৃত হয়েছিলেন।
ফিক্সড ট্যাক্স পরিশোধের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি প্রায় ১৫ বছর বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। বৈদেশিক আয়, উপঢৌকন ও উত্তরাধিকার হিসেবে অর্জিত আয় থেকে তাদের আলাদাভাবে কর দিতে হয় না।
ইতালিতে বিনিয়োগে বৈশ্বিক ধনীদের আকৃষ্ট করতে ২০১৭ সালে কর নীতিটির প্রচলন করেন দেশটির সরকার। তখন কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, এ সুযোগ নিতে ইতালিতে বিদেশী ধনীদের আসার হার বাড়বে। এতে করে দেশটির অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
তবে সাম্প্রতিক অর্থনীতি ও স্থানীয়দের অসন্তোষের কারণে পুরনো সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ইতালি। এ বিষয়ে দেশটির অর্থমন্ত্রী জিয়ানকার্লো জর্জেত্তি বলেছেন, ‘অতিধনীদের আর্থিক সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে ইতালি অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কথা ভেবেছিল। বর্তমানে সেই নীতি থেকে সরে এসেছে।’
সাধারণত এ ধরনের প্রতিযোগিতাকে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপভেন্ট (ওইসিডি) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো সংস্থাগুলো নিরুৎসাহিত করে থাকে।
বিদেশী ধনী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ থেকে দেশগুলো উপকৃত হতে পারে বা হয়ে থাকে। তবে এর মাধ্যমে আমন্ত্রণকারী দেশে আঞ্চলিক বৈষম্যও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে একটি দেশে নাগরিক নির্বিশেষে দেয়া নির্ধারিত পরিষেবাগুলোয় ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এ বিবেচনায় ইতালিতে ট্যাক্স দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাজেট ঘাটতি মোকাবেলা ইতালি সরকারের জন্য কিছুটা সহজ হবে।
২০২৩ সালে ইতালির জিডিপিতে ঘাটতি ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ঘাটতি ইউরোপীয় কমিশনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ছিল। কমিশনের বেঁধে দেয়া ঘাটতির হার ছিল ৩ শতাংশ। তবে ফিক্সড ট্যাক্স দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তে ইতালি ঠিক কতটা উপকৃত হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
এদিকে অতিধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবেলাকে সামনে আনা হচ্ছে। সম্প্রতি শীর্ষ ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি২০-এর অর্থমন্ত্রীরা সম্পদ কর কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে একমত হয়েছেন। গত মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এক ঘোষণায় তারা বলেন, দেশগুলোর কর সার্বভৌমত্বের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে আমরা উচ্চ নিট সম্পদের মালিকদের ওপর কার্যকরভাবে করারোপ নিশ্চিত করতে পরস্পরকে সহযোগিতা করব।
সম্মেলনে বিলিয়নেয়ারদের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব দেয় স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল। অবশ্য অতিধনীদের ওপর ব্রাজিলের প্রস্তাবে জি২০ দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। ফ্রান্স, স্পেন ও দক্ষিণ আফ্রিকা সমর্থন জানালেও বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ঝড়ঁৎপব : ঊঁৎড় ঘবংি
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন