বিশ্বের অন্য অঞ্চলের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরে ইউরোপের দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা বেশি। কম প্রবৃদ্ধি ও কয়েকটি দেশে সংকোচনমূলক অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে মহাদেশজুড়ে। এমনকি আর্থিক চাপের কারণে সংরক্ষণবাদী নীতি অবলম্বনে বাধ্য হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে সাম্প্রতিক প্রান্তিকে ডিসপোজাল ইনকাম বা কর-পরবর্তী আয় বাড়ায় কিছুটা সুফল পাচ্ছে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা, যার অন্যতম অংশীদার শীর্ষ অর্থনীতিগুলো।
ইউরো নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ইউরোপের শীর্ষ অর্থনীতিতে কর-পরবর্তী খানাপিছু আয় বেড়েছে দশমিক ২ থেকে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত। একই সময়ে মাথাপিছু প্রকৃত জিডিপি বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশে বেড়েছে।
কর-পরবর্তী আয় একজন উপার্জনকারীর আয়ের সেই অংশ যা সব ধরনের আয়কর কাটার পর তার হাতে থাকে। সাধারণত ভোক্তা ব্যয়, লেনদেনের ক্ষমতা, সম্ভাব্য সঞ্চয় ও একটি দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা পরিমাপ করতে কর-পরবর্তী আয় ব্যবহার করেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে প্রকৃত খানাপিছু আয় হলো সদস্যদের গ্রস কর-পরবর্তী আয়।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) দেয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশে প্রকৃত খানাপিছু আয় ও প্রকৃত জিডিপি উভয়ই বেড়েছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, মাথাপিছু কর-পরবর্তী আয়ে এগিয়ে রয়েছে পোল্যান্ড। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ২ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কর-পরবর্তী আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। ওইসিডির মতে, আয় বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এ সময় কর্মক্ষেত্রে বেতন, বোনাস ও অন্য সুবিধা বেড়েছে। একই সঙ্গে বিনামূল্যের পরিষেবা বাদ দিয়ে সরকারি সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থা থেকে তারা উপকৃত হয়েছেন এবং আবাসন বা বিনিয়োগ থেকে আয় করেছেন তারা।
পোল্যান্ডের পর কর-পরবর্তী আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পর্তুগাল। এ সময় দেশটির উপার্জনকারীদের আয়কর বাদ দিয়ে পকেটে অর্থ থাকার পরিমাণ ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে ইউরোপের শীর্ষ অর্থনীতির মধ্যে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নিয়ে রেকর্ড করেছে ইতালি। ওইসিডি জানাচ্ছে, আগের প্রান্তিকের তুলনায় জানুয়ারি-মার্চে দেশটিতে কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অক্টোবর-ডিসেম্বরে বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুবিধা কমলেও জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বেড়েছে।
এছাড়া স্পেন ও জার্মানিতে প্রকৃত খানাপিছু আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পেনে অক্টোবর-ডিসেম্বরের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধির পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এর হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে আগের প্রান্তিকের দশমিক ১ শতাংশের বিপরীতে জার্মানিতে বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আংশিকভাবে কর্মীদের বেতন, বোনাস ও অন্য সুবিধার ওপর নির্ভরশীল ছিল।
ফ্রান্সে প্রকৃত খানাপিছু আয় দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা মূলত মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে রাষ্ট্রের দেয়া সুবিধার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জানায় ওইসিডি। অন্যদিকে দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ইউরোজোনের বাইরের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাজ্যকে।
এদিকে কর-পরবর্তী আয়ে সবচেয়ে বড় পতনের সম্মুখীন হয়েছে গ্রিস, সেখানে হ্রাস পেয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর বেলজিয়াম ও চেক রিপাবলিক ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং হাঙ্গেরিতে জানুয়ারি-মার্চে আগের প্রান্তিকের তুলনায় কর-পরবর্তী আয় কমেছে দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া সুইডেন ও ডেনমার্কে সামান্য হ্রাস পেয়েছে।
প্রকৃত মূল্যস্ফীতির সমন্বয় করে দেখা যায়, ইউরোপজুড়ে ২৭ দেশের মধ্যে ২১টিতে মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে, যদিও কিছু দেশে এর পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য। এ সময় সর্বোচ্চ ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রেকর্ড করেছে তুরস্ক, এরপর রয়েছে লাটভিয়া ১ দশমিক ১ শতাংশ।
শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির মধ্যে স্পেন ও যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু জিডিপি দেখা গেছে, উভয় দেশেই বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ইতালিতে মাথাপিছু প্রকৃত জিডিপি বেড়েছে দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ফ্রান্স ও জার্মানিতে হয়েছে দশমিক ২ শতাংশ। তবে ১ দশমিক ৫ শতাংশ বা এর বেশি হ্রাস পাওয়ায় মাথাপিছু প্রকৃত জিডিপিতে পতন দেখেছে আইসল্যান্ড ও ডেনমার্ক।
প্রান্তিক হিসেবে মাথাপিছু প্রকৃত জিডিপির সঙ্গে প্রকৃত খানাপিছু আয়ের তুলনা করলে দেখা যায়, কিছু দেশে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। যেখানে একটি বাড়লে অন্যটি কমেছে। যেমন গ্রিসে প্রকৃত জিডিপি দশমিক ৯ শতাংশ বাড়লেও প্রকৃত খানা আয় ১ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। চেক রিপাবলিকে প্রকৃত জিডিপি দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে ও প্রকৃত খানা আয় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। বিপরীতভাবে নেদারল্যান্ডসে প্রকৃত জিডিপি দশমিক ৬ শতাংশ কমলেও প্রকৃত খানা আয় আড়াই শতাংশ বেড়েছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন