রয়টার্স এক্সক্লুসিভঃ চীনের চাপে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা, ভারী দুর্লভ খনিজের যোগান হুমকির মুখে – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

রয়টার্স এক্সক্লুসিভঃ চীনের চাপে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা, ভারী দুর্লভ খনিজের যোগান হুমকির মুখে

  • ০৯/০৭/২০২৫

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেনচমার্ক মিনারেল ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক নেহা মুখার্জি বলেন, ‘কাচিন থেকে ভারী দুর্লভ খনিজ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে বছরের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক বাজারে ঘাটতি তৈরি হতে পারে।‘  তিনটি সূত্র জানায়, চীন কেআইএকে হুমকি দিয়েছে—যদি তাদের বিদ্রোহীরা ভামোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা বন্ধ না করে তবে কেআইএ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের খনিজ কেনা বন্ধ করে দেবে চীন। তবে চীন এই হুমকি কার্যকর করেছে কিনা তা জানা যায়নি। চলমান সংঘর্ষের কারণে খনন ও রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্বের ভারী দুর্লভ খনিজের সরবরাহ আংশিকভাবে নির্ভর করছে মিয়ানমারের উত্তরের পাহাড়ি অঞ্চলে বিদ্রোহী বাহিনী এবং চীন-সমর্থিত সামরিক জান্তার মধ্যে মাসব্যাপী চলমান সংঘাতের ওপর। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের অংশ হিসেবে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) ডিসেম্বর থেকে চীনা সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের ভামো শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য জান্তার সঙ্গে লড়াই করছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ভারী দুর্লভ খনিজ কাচিন রাজ্যের খনিগুলো থেকে উত্তোলন করা হয়। এই খনিজগুলো চীনে রফতানি করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আর বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং বায়ুচালিত টারবাইনের জন্য চুম্বক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এসব এসব খনিজ।

তিনটি সূত্র জানায়, চীন কেআইএকে হুমকি দিয়েছে—যদি তাদের বিদ্রোহীরা ভামোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা বন্ধ না করে তবে কেআইএ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের খনিজ কেনা বন্ধ করে দেবে চীন। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো এই আল্টিমেটামের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, চীন কীভাবে এই খনিজ সরবরাহকে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। তবে চীন এই হুমকি কার্যকর করেছে কিনা তা জানা যায়নি। চলমান সংঘর্ষের কারণে খনন ও রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এ বছর মিয়ানমার থেকে দুর্লভ খনিজের সরবরাহ বড় আকারে কমেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্সকে জানায়, কেআইএর সঙ্গে আলোচনার সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের জানা নেই। তবে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও কাচিন স্বাধীনতা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি আলোচনা চীন-মিয়ানমারের এবং তাদের জনগণের স্বার্থের মধ্যেই রয়েছে বলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান। কেআইএর এক কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্য সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি চীন তাদের প্রস্তাব করেছে—যদি বিদ্রোহীরা ভামোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা বন্ধ করে, তবে সীমান্ত বাণিজ্য আরো বাড়ানো হবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন বলেন, ‘চীনের চাপের মূল উদ্দেশ্য গৃহযুদ্ধের সমাধান নয়, বরং সংঘর্ষ কমিয়ে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ এগিয়ে নেয়া।‘ গত অক্টোবরে কাচিনের মূল দুর্লভ খনি অঞ্চল দখলের পর কেআইএ ভামোর দিকে অগ্রসর হয়। এর পর বিদ্রোহীরা খনিজ উত্তোলনের ওপর কর বাড়িয়ে উৎপাদন সীমিত করেছিল। এর ফলে টারবিয়ামের দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বী।

চীনের শুল্ক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটি মিয়ানমার থেকে মাত্র ১২ হাজার ৯৪৪ মেট্রিক টন দুর্লভ খনিজ অক্সাইড ও ধাতু আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেক। তবে এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে রফতানি কিছুটা বেড়েছে। দুই কেআইএ কর্মকর্তার মতে, তারা আত্মবিশ্বাসী যে চীন শেষ পর্যন্ত খনিজ আমদানি বন্ধ করবে না। কারণ এই খনিজের ওপর তাদের বাণিজ্য প্রবলভাবে নির্ভরশীল। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার সংকটে নিমজ্জিত। বিদ্রোহীরা দেশজুড়ে বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে চীন তাদের জান্তার সঙ্গে সমঝোতার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের তথ্যমতে, চীন এরইমধ্যে জান্তার কাছে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন সরবরাহ করেছে।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, চীন কেআইএর সঙ্গে আলোচনা করতে পারে, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেননি। এক কেআইএ কর্মকর্তা জানান, চীনা কর্মকর্তারা গত ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের ভামো থেকে সরে যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা উল্টো আক্রমণ আরো জোরদার করেছে। ভামোর জন্য চলমান লড়াই কেআইএর বিপুল সম্পদ এবং শত শত প্রাণহানি ঘটিয়েছে। বসন্তকালে আলোচনায় চীন আরো কড়া অবস্থান নেয় এবং রফতানি বন্ধের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেনচমার্ক মিনারেল ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক নেহা মুখার্জি বলেন, ‘কাচিন থেকে ভারী দুর্লভ খনিজ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে বছরের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক বাজারে ঘাটতি তৈরি হতে পারে।‘ এদিকে, কেআইএ দাবি করেছে তারা ভামোর বড় অংশ দখলে নিলেও জান্তার বিমান হামলায় শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক নাথান রুজার স্যাটেলাইট চিত্র দেখে জানান, শহরের বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি বিমান হামলা থেকে হয়েছে। তবু কেআইএর নেতাদের বিশ্বাস, ভামো দখলে নিলে জনগণের সমর্থন বাড়বে এবং পরিস্থিতির মোড় ঘুরবে। এক কেআইএ কমান্ডার বলেন, ‘চীন দুর্লভ খনিজের জন্য আমাদের ওপর নির্ভরশীল। তারা এই পরিস্থিতি খুব বেশি দিন সহ্য করবে না।‘

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us