যুদ্ধের আঁচ না লাগা উপসাগরীয় দেশগুলোর লাভের কূটনীতি – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন

যুদ্ধের আঁচ না লাগা উপসাগরীয় দেশগুলোর লাভের কূটনীতি

  • ২৮/০৬/২০২৫

সৌদি আরব স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পূর্বশর্ত হলো গাজায় চলমান সংঘাতের অবসান।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক প্যাট্রিক থেরোস বলেন, ‘এই সংকট উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বকে দৃঢ় করেছে। তারা কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় থেকেছে এবং তাদের ভূখণ্ডে কোনো বড় আঘাত আসেনি।‘
ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতা ভারসাম্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্লেষক ও আরব কর্মকর্তারা বলছেন, এই সংঘাতে দুটি পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে উপসাগরীয় দেশগুলো তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতির শিকার হয়ে এখন তাদের নিজেদের সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
আরব কূটনীতিকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাদের আলোচনায় এই বিষয়টিকেই তুলে ধরছেন। তবে এই প্রথমবারের মতো আরব শাসকরা একটি প্রচলিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সক্ষমতা দেখতে পেলেন। মিডল ইস্ট আই-এর সঙ্গে কথা বলা তিনজন আরব কূটনীতিক বলেছেন, তাদের দেশে এই মূল্যায়ন করা হচ্ছে যে, ইসরায়েলই প্রথম যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল, কারণ তাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর তালিকা শেষ হয়ে যায়। তারা এটাও বুঝতে পেরেছিল যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পতন হচ্ছে না।
কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদর আল-সাইফ বলেছেন, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতদিন আকাশে উড়ছিলেন। অবশ্যই, ইসরায়েল ইরানের আকাশে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। তবে ইরান ইসরায়েলি আগ্রাসন থামিয়ে পাল্টা আঘাত করেছে। অভ্রান্ত বিমান প্রতিরক্ষা সহ এক অপরাজেয় ইসরায়েলের ধারণা ভেঙে গেছে।‘
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দুর্বলতা সম্পর্কে এই ধারণাটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ইসরায়েলের সাথে কীভাবে আচরণ করবে। আরব কূটনীতিকরা বলেছেন, তেহরানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। উপসাগরীয় নেতারা তেহরানকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিতে পারেন আশা তাদের এবং সামনের মাসগুলোয় উচ্চপর্যায়ের সফরের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। গত এপ্রিলে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাই তেহরান সফর করেন।
আরব কূটনীতিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, উপসাগরীয় দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব, ইউএই ও কাতার শুরু থেকেই যুদ্ধবিরতির পক্ষে কাজ করেছে। ইরানের পাল্টা হামলায় কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়। তবে তা আগেই উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত ছিল বলে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক প্যাট্রিক থেরোস বলেন, ‘এই সংকট উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বকে দৃঢ় করেছে। তারা কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় থেকেছে এবং তাদের ভূখণ্ডে কোনো বড় আঘাত আসেনি।‘
আগে উপসাগরীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী ছিল। কিন্তু গাজা যুদ্ধ ও ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। থেরোস বলেন, ‘এখন সৌদি শাসকদের মধ্যেও ইরানের প্রতি সহানুভূতি বেড়েছে।‘
২০১৮ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যর্থতা ও যুক্তরাষ্ট্রের উদাসীনতায় পর সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়। ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় রিয়াদ-তেহরান সমঝোতা হয়। যুদ্ধের সময় এটি সবার জন্য কার্যকর ছিল। চীন তার তেল চালানের জন্য যে হরমুজ প্রণালির উপর নির্ভরশীল, তা খোলা ছিল। ইসরায়েলি হামলা সত্ত্বেও ইরানের তেল রফতানি বেড়েছে এবং সৌদি আরবের তেল স্থাপনাগুলো নিরাপদেই ছিল। বদর আল-সাইফ বলেছেন, ‘উপসাগর ২০১৯ সালের মতো নেই। উপসাগরীয় দেশগুলো যুদ্ধ না করে নিজেদের সঠিক প্রমাণ করেছে।‘
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের পর উপসাগরীয় অঞ্চলে ইসরায়েলের প্রতি জনমত আরো নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। গাজা যুদ্ধের প্রথম মাসগুলোতে দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি দ্বারা প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সৌদি আরবের ৯৬ শতাংশ মানুষ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিপক্ষে।
ট্রাম্প গত বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি গাজায়ও কার্যকর করতে চান। এদিকে, সৌদি আরব স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পূর্বশর্ত হলো গাজায় চলমান সংঘাতের অবসান।
চলতি বছরের মে মাসে রিয়াদ সফরের সময় সৌদি সরকারের চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে সৌদিকে রাজি করানোর চেষ্টা থেকে বিরত ছিলেন। তবে তিনি সৌদি নেতৃত্বকে বলেন, ‘আপনারা চুক্তি করলে তা হবে আমার প্রতি দারুণ সম্মান প্রদর্শন।‘
সৌদি আরবের বক্তব্য হল— ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে তেল আবিবকে অবশ্যই একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথে অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কূটনীতিকরা বলছেন, ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধের পর সৌদি আরব এখন এই ধরনের চুক্তির বিনিময়ে আরো বেশি কিছু দাবি করতে পারবে। একজন আরব কূটনীতিক মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘সৌদি আরব খুব ভালো করেই বোঝে, আরব জনতা কোন দিকে যাচ্ছে। তারা এবার এমন কিছুই চাইবে যা সত্যিকারের অর্থপূর্ণ।’

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us