রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায় ভারতে রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানি ১০ গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল (বিআইএমসিও)। সংস্থাটির মতে, বর্তমানে ভারতের আমদানীকৃত জ্বালানি তেলের ৪০ শতাংশ আসছে রাশিয়া থেকে। চলতি বছর দেশটি থেকে দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল হারে আমদানি হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২১ সালে শুরু হয়। আগ্রাসনের অভিযোগ এনে ইউক্রেনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। বিআইএমসিওর হিসাবমতে, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে সমুদ্রপথে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের অন্তত ৬৫ শতাংশ রফতানি হতো ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে।
দেশ দুটিতে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার নতুন ক্রেতা খুঁজতে বাধ্য হয় রাশিয়া। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে ভারত। রাশিয়ার ইউরাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়ায় ভারত। তবে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে জি৭ গ্রুপের ঠিক করে দেয়া ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার বা এর চেয়ে কম দামে জ্বালানি তেল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া।
ভারতের সমুদ্রপথে রুশ জ্বালানি তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিআইএমসিওর তথ্যমতে, সমুদ্রপথে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রফতানির ৩৫-৪০ ভাগ হচ্ছে ভারতে। ফলে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় নাগাদ ভারত রুশ জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে। একই সময়ে দেশটিতে সমুদ্রপথে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর তেল আমদানি ৭০ থেকে কমে ৪৫ শতাংশে নেমেছে। কেননা অঞ্চলটি তাদের রফতানি গন্তব্য উত্তর ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরের দিকে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে।
বিআইএমসিও বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে রুশ জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়ায় অয়েল ট্যাংকারগুলোর গড় যাত্রাপথ ১০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে পরিবহনকৃত জ্বালানি তেল পরিমাণ ২ শতাংশ কমলেও টন-মাইল (এক টন জ্বালানি তেল নিয়ে ট্যাংকারের ১ কিলোমিটার যাত্রা) ৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে ২০২১ সালের তুলনায় যাত্রাপথের দূরত্ব বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
ভারতের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ক্রয়ের ধরনে পরিবর্তন আসায় আফ্রাম্যাক্স ও সুয়েজম্যাক্স ট্যাংকারের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে আমদানি ব্যবস্থার ৫৫ শতাংশ দখল করছে এ ধরনের ট্যাংকার। অন্যদিকে ভিএলসিসির (ভেরি লার্জ ক্রুড কারিয়ার) ব্যবহার কমেছে। এ পরিবর্তনের ফলে ভারতে চলাচলকারী জাহাজগুলোর বয়স গড় চার বছর বেড়েছে। ফলে ২০ বছরের বেশি বয়সী জাহাজের সংখ্যা ২-১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
বিআইএমসিও বলছে, বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া-ভারত বাণিজ্যের বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) পূর্বাভাস বলছে, রাশিয়ার বর্তমান উত্তোলনের হার দীর্ঘমেয়াদে ভারতের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে না। ফলে বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজতে বাধ্য হবে ভারত।
Source : ইন্ডিয়া শিপিং নিউজ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন