সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের আমানত বাড়ছে কেন – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের আমানত বাড়ছে কেন

  • ২৫/০৬/২০২৫

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো একসময় গোপনীয়তার জন্য বিখ্যাত ছিল। সারা বিশ্বের কালো টাকার মূল গন্তব্যই ছিল এসব ব্যাংক। কিন্তু এখন প্রতিবছরই সুইস ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সঞ্চিত অর্থের হিসাব বেরিয়ে যাচ্ছে। তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কেন বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশের মানুষেরা এসব ব্যাংকে টাকা রাখছেন।
ভারতীয় নাগরিকেরা কেন সুইস ব্যাংকগুলোতে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন, তা নিয়ে ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে ভিন্ন এক প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব ব্যাংকে গচ্ছিত কিছু অর্থের উৎস সন্দেহজনক হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের নতুন নিয়ম, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাবাজারের ওঠানামা—এসব কারণে অনেক অনাবাসী ভারতীয়, ভারত ত্যাগ করা ধনী পরিবার ও ভারতের ধনী পরিবারও সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখছেন।
অভিবাসনবিষয়ক বিশ্লেষক ও খাত–সংশ্লিষ্ট অন্যদের মতে, সুইস ব্যাংকগুলোতে সম্প্রতি ভারতীয়দের যে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমেছে, তার বেশির ভাগই ‘কালো টাকা’ নয়। বরং এই অর্থ মূলত বিদেশে থাকা ভারতীয়দের, যাঁরা অন্যান্য দেশে সঞ্চিত অর্থ স্থানান্তর করে সুইজারল্যান্ডে আনছেন। অনেকে তাঁদের পারিবারিক সম্পদ সুইস ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্টে রাখছেন, এসব ফাউন্ডেশন তুলনামূলকভাবে অনুকূল নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এমনকি বিদেশি আইন অনুযায়ী গঠিত ট্রাস্টকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিধান সুইজারল্যান্ডের আইনে আছে।
ভারতের আইন সংস্থা খাইতান অ্যান্ড কোর অংশীদার মইন লাধা ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের নিয়মে সাম্প্রতিক রদবদলের ফলে অনেক অনাবাসী ভারতীয় আরব আমিরাত বা ইউরোপে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা সম্পদও সরিয়ে নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক গন্তব্য। এটাই হতে পারে সুইস ব্যাংকগুলোতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির মূল কারণ। এই দুটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এখন অন্যদের তুলনায় অনুকূল। সে কারণে বিশ্বের অনেক দেশের বিনিয়োগকারীরা এসব দেশের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছর যুক্তরাজ্যের ২০০ বছরের পুরোনো ব্যবস্থায় বদল এসেছে। ফলে বহু ভারতীয় পরিবার বিদেশে দ্বিতীয় আবাস খুঁজছেন, বিদেশি আয় ও উত্তরাধিকারে উচ্চ কর এড়ানোর জন্য।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপক, বিমা কোম্পানি ও অন্যান্য আর্থিক মাধ্যমে ভারতীয়দের সঞ্চিত অর্থ ৩ গুণ বেড়ে ৩৯২ কোটি ডলার হয়েছে। তবে ভারতীয় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত বা খুচরা হিসাবের অর্থ মাত্র ১১ শতাংশ বেড়েছে। লাধা বলেন, বিষয়টি কার্যত একধরনের পুনর্বিন্যাস। বৈশ্বিক নিয়মকানুন ও করনীতির কারণে মূলধন পুনর্বিন্যাসে যে বড় পরিবর্তন এসেছে, এটি তার ইঙ্গিত।
ভারতীয়দের আমানত কেন বাড়ল, সে বিষয়ে যদিও সুইস ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক করব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ ঈশা শেখরি ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, সুইজারল্যান্ড যে আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বস্ত, এই ঘটনা থেকে তা আবারও বোঝা যায়। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সুইস মুদ্রার শক্তি ও স্থিতিশীলতা, নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে এর পরিচিতি ও দ্রুত খাপ খাওয়ানো নিয়মনীতি—সব মিলিয়ে মূলধন সংরক্ষণের জন্য দেশটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
গত বছর সুইস মুদ্রা কিছুটা দুর্বল হলেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের বিপরীতে এই মুদ্রার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জি১০ দেশগুলোর মধ্যে সুইস মুদ্রার দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য আর্থিক সম্পদের তথ্য বিনিময়ের চুক্তিতে সই করছে। ফলে সুইস ব্যাংকগুলোতে গোপনে অবৈধ অর্থ রাখার আগ্রহ অনেকটাই কমেছে। সুইস কর্তৃপক্ষও সক্রিয়। অনেক বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাবের তথ্য প্রকাশ করছে তারা। এই পরিস্থিতিতে ভারতের আয়কর বিভাগ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কালো টাকা ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ করে অনাবাসী ভারতীয়দের নোটিশ পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আয়করবিষয়ক পরামর্শক ঈশা শেখরি ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, এসব হিসাবের অনেকটি (যেগুলোর সঙ্গে ভারতীয়দের সম্পর্ক রয়েছে) বিনিয়োগ মাধ্যম বা ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, ভারতীয় ব্যক্তিরাই যার ‘চূড়ান্ত উপকারভোগী মালিক’, যদিও তাঁদের নাম সরাসরি হিসাবে উল্লেখিত না–ও থাকতে পারে। বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিবেদনের মানদণ্ডের পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের সম্পদ আরও দৃশ্যমান হচ্ছে।

আইন পরিবর্তনের পরও সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়রা অর্থ গচ্ছিত রাখছেন। সংবাদে বলা হয়েছে, বড় বড় পরিবারগুলো উত্তরাধিকারীদের নাম গোপন রাখতে চাইত। সে ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলোর এই গোপনীয়তা কাজে এসেছে, কর ফাঁকির পাশাপাশি সম্পদ পরিকল্পনাতেও সুবিধা হয়েছে।

এদিকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩ গুণ বেড়েছে। জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি সুইস ফ্রাঁ (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা) বা ৬৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us