মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় নেয়া যাচ্ছে না রুশ হেলিকপ্টার বছরের পর বছর অলস বসে আছে বাংলাদেশ পুলিশের এভিয়েশন উইং – The Finance BD
 ঢাকা     শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় নেয়া যাচ্ছে না রুশ হেলিকপ্টার বছরের পর বছর অলস বসে আছে বাংলাদেশ পুলিশের এভিয়েশন উইং

  • ২৫/০৬/২০২৫

দুর্গম অঞ্চলে দ্রুত যোগাযোগ, গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা, তল্লাশি এবং উদ্ধার কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকার জন্য এভিয়েশন উইং প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ পুলিশ। পাইলটের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় চার পুলিশ কর্মকর্তাকে। হেলিকপ্টার কিংবা উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হয় প্রশিক্ষিত জনবল। পাশাপাশি পুলিশের উইংটির জন্য দুটি হেলিকপ্টার কিনতে বছর পাঁচেক আগে রুশ প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টারস’-এর সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। যদিও রাশিয়ার কাছ থেকে সেগুলো নেয়া সম্ভব হচ্ছে না দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায়।

এদিকে সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও হেলিকপ্টারের কারণে অভিযানে যুক্ত হতে পারেনি পুলিশের এভিয়েশন উইং। বছরের পর বছর অলস বসে আছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও। এতে বাড়ছে দক্ষতা লোপ পাওয়ার শঙ্কা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনে পুরনো চুক্তি বাতিল করে নতুন চুক্তির মাধ্যমে হেলিকপ্টার সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় বিশেষ উইংটির পেছনে ব্যয় করা অর্থ ও শ্রম দুটোই জলে যাবে।

পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা দমন করতে গিয়ে প্রায়ই পুলিশ সদস্যরা আহত হন। দুর্গম এলাকায় আহত পুলিশ সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা অন্য কোনো স্থানে আনা-নেয়ার জন্য বাহিনীতে কোনো হেলিকপ্টার নেই। ফলে অনেকেই উন্নত চিকিৎসার অভাবে পথেই মারা যান। এছাড়া অভিযান ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম মোকাবেলায় হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হয়। সেই সঙ্গে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক সেবা দেয়ার জন্যই মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয় পুলিশের এভিয়েশন উইং।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, হেলিকপ্টার চালানোর জন্য ২০২১ সালের জুলাইয়ে চার পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে আর্মি এভিয়েশন স্কুলে শুরু হয় বেসিক ট্রেনিং কোর্স। সেখানে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর ১০ কর্মকর্তার সঙ্গে ‘সলো ফ্লাই’ বা কো-পাইলট ছাড়া একক উড্ডয়নের প্রশিক্ষণ নেন মো. মুশফিকুল হক, সারোয়ার হোসেন, ফাতেমা তুজ জোহরা ও আবুল হোসাইন। মানসিক, শারীরিক সুস্থতা, দক্ষতা, সক্ষমতা ও তৎপরতার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চূড়ান্ত অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট দিয়ে উড়োজাহাজের ককপিটে পাইলটের সিটে বসেন এ চার এএসপি। এর বাইরে আরো দুজন পুলিশ কর্মকর্তা আর্মি এভিয়েশনে হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। কয়েকজন এসআই ও কনস্টেবলও র‌্যাবের এয়ার উইংয়ে যুক্ত হয়ে হেলিকপ্টার রক্ষণাবেক্ষণ শেখেন।

পুলিশের বিশেষ এ উইংয়ের জন্য হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। একই বছরের ১৯ নভেম্বর ‘এমআই ১৭১এ২’ মডেলের দুটি হেলিকপ্টার কেনার জন্য জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টারসের সঙ্গে চুক্তি করে পুলিশ। দাম ধরা হয় ৪২৮ কোটি টাকা। সঙ্গে পরিচালন ব্যয় ৫০ লাখ। ‘এমআই ১৭১এ২’ মডেলের হেলিকপ্টার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। একবার জ্বালানি নিয়ে উড়তে পারে ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। হেলিকপ্টারগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার কেজি ওজন পরিবহনে সক্ষম। তবে এগুলো সামরিক কোনো কাজে ব্যবহার উপযোগী নয়।

এদিকে চুক্তির পর রুশ প্রতিষ্ঠানটি তাদের কারখানা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ পুলিশকে। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারীর কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। হেলিকপ্টার দুটি সরবরাহে এ পর্যন্ত কয়েক দফা দিন নির্ধারণ করেও পিছিয়ে দেয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। প্রশিক্ষণ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ‘সলো ফ্লাইট’ হচ্ছে ১৫ মিনিটের একটা সার্কিট কমপ্লিট। অর্থাৎ রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করে এক হাজার ফুট ওপরে চক্কর দিয়ে ল্যান্ড করা। একটি সলো ফ্লাইট সম্পন্ন করতে সাধারণত ১৫ মিনিট লাগে। উড্ডয়নের পর ল্যান্ডিং সবচেয়ে কঠিন বলে ধরা হয়। রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর কোনো কারণে ল্যান্ড করতে সমস্যা হলে আবারো সার্কিটটি পূর্ণ করে নেমে আসতে হয়। নিয়মিত চর্চার মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া নিখুঁত হয়। তবে প্রশিক্ষণ শেষ হলেও পুলিশ এভিয়েশনের হেলিকপ্টার যুক্ত না হওয়ায় নিয়মিত উড্ডয়ন চর্চা সম্ভব হচ্ছে না।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশিক্ষণের প্রাথমিক একটি ধাপ ‘সলো ফ্লাইট’। এখানে মূলত উড্ডয়ন ও অবতরণের প্রাথমিক ধাপগুলো শেখানো হয়। পর্যায়ক্রমে আরো বেশকিছু ধাপ  রয়েছে, যেগুলো মূলত নিয়মিত উড়োজাহাজ পরিচালনার মাধ্যমে রপ্ত করতে হয়। আর এটি এমন এক প্রশিক্ষণ, যা নিয়মিত চর্চার মধ্যে না থাকলে এর উৎকর্ষ ম্লান হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাইলট প্রশিক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেয়ার পর পাইলটদের বসিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এতে করে অর্থেরও যেমন অপচয়, তেমনই শ্রমেরও।’

হেলিকপ্টার কেনার আগে পাইলট প্রশিক্ষণকে ঘোড়ার আগে চাবুক কেনার মতো অবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘দুর্বল পরিকল্পনার ফলেই এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন পুরো প্রকল্পটিই রিভিউ করা প্রয়োজন যে আদৌ পুলিশ বাহিনীতে এ ধরনের উইংয়ের প্রয়োজন রয়েছে কিনা। আর থাকলেও সেটা কতটুকু? সার্বিক বিষয়ে রিভিউ করতে হবে। কেননা হেলিকপ্টার কিনলেই কেবল হলো না, এর রক্ষণাবেক্ষণ বেশ ব্যয়বহুল।’

পুলিশের এভিয়েশন উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাইলটদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলেও তাদের জন্য কেনা হেলিকপ্টারে ট্রায়াল দেয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে প্রথম কয়েক দিন আর্মি এভিয়েশনের প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে তা পরিচালনা করতে হবে। এ সময় পুলিশের পাইলটরা কো-পাইলট হিসেবে পাশে থাকবেন। পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হেলিকপ্টার দুটি ২০২৩ সালে সরবরাহের কথা থাকলেও হয়নি। পরে যোগাযোগ করা হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, আগামী জুলাই ও আগস্টে সরবরাহ করবে। আশা করছি এবার নির্ধারিত সময়েই হেলিকপ্টারগুলো পর্যায়ক্রমে পুলিশ এভিয়েশনে যুক্ত হবে।’

 

 

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us