ইরান-ইসরায়েল সংঘাত প্রায় ফাঁকা হরমুজ প্রণালি, সংকটে জ্বালানি পরিবহন – The Finance BD
 ঢাকা     শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত প্রায় ফাঁকা হরমুজ প্রণালি, সংকটে জ্বালানি পরিবহন

  • ২৪/০৬/২০২৫

ইরানে মার্কিন হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়তে থাকায় বিশ্ব বাণিজ্যিক নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা এক কঠিন সংকটে পড়েছে। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহন রুট হরমুজ প্রণালি এখন অনেকটাই ফাঁকা। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর হরমুজ প্রণালি থেকে দুই তেল পরিবহনের জাহাজ ফিরে গেছে। অন্য জাহাজগুলো নিরাপদ দূরত্বে অপেক্ষা করছে বা অন্য রুট অনুসরণ করছে।

জাহাজ চলাচলের তথ্যের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার ‘কোসউইজডম লেক’ ও ‘সাউথ লয়্যালটি’ নামের দুটি খালি সুপারট্যাংকার হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করলেও তারা আচমকা গন্তব্য বদলে ফেলে। দুটি জাহাজের প্রতিটি প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহনে সক্ষম।

বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং সংগঠন বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল বলছে, হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচল একেবারেই কমে গেছে। সংগঠনের নিরাপত্তাপ্রধান ইয়াকব লারসেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের আগে কিছুটা সতর্কতা ছিল ঠিকই, কিন্তু হামলার পর এখন অনেক কোম্পানি প্রণালি এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে, যদি ইরান জাহাজে সরাসরি হামলা শুরু করে।

বিশ্বের অন্যতম বড় শিপিং কোম্পানি জাপানের নিপ্পন ইউসেন ও মিতসুই ও এস কে লাইন প্রণালিতে প্রবেশের আগে তাদের জাহাজগুলোকে অপেক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। যদিও তারা এখনই সম্পূর্ণভাবে রুট বন্ধ করেনি, তবে কোনো সম্ভাব্য আক্রমণের ঝুঁকি থাকলে একাধিক দিন দেরি করে যাত্রা শুরু করতে বলেছে। জার্মান শিপিং জায়ান্ট হাপাগ-লয়েড জানিয়েছে, তারা এখনো হরমুজ প্রণালি দিয়ে চলাচল করছে ঠিকই, তবে পরিস্থিতি যেকোনো সময় পাল্টাতে পারে। তাদের জরুরি সাড়া দেয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কিছু এলএনজি সরবরাহকারী এরই মধ্যে তাদের ক্রেতাদের বলেছে যেন তারা উপসাগরে অপ্রয়োজনে অবস্থান না নেয়। সব মিলিয়ে শিপিং সময়সূচি ও রুট পুনর্নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।

এর ফলে বীমা খরচও বেড়ে গেছে। প্রতিটি শিপিং কোম্পানি এখন দিনে একাধিকবার নিরাপত্তা বিশ্লেষণ করছে এবং বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বীমা খরচ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এবং সরবরাহ বিলম্বের কারণে বৈশ্বিক পণ্য ও জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওয়াশিংটন এরই মধ্যে বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধের সম্ভাবনা ঠেকাতে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কারণ এ রুটের স্থবিরতা বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

১৯৮০-এর দশকে পারস্য উপসাগরে এক অদৃশ্য যুদ্ধের জন্ম হয়েছিল, যার কেন্দ্র ছিল ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত এ হরমুজ প্রণালি। ইরান আশির দশকের মতো আবারো ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’ শুরু করতে যাচ্ছে কিনা সে আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ওই সংঘাতে ইরান ও ইরাক সমানতালে সামুদ্রিক মাইন, ক্ষেপণাস্ত্র ও স্পিডবোট দিয়ে একে অন্যের তেলবাহী জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এবারো সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। যদিও ইরানের শাসকগোষ্ঠীর ভেতরের একটি অংশ জানিয়েছে, এখনই হরমুজ বন্ধ করার মতো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, তবুও প্রণালিকে ঘিরে সামরিক প্রস্তুতি তীব্র হচ্ছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us