মোবাইল ফোন শিল্প ধীরে ধীরে আরো দক্ষভাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি শক্তি ব্যবহার করছে এবং পরিবেশ দূষণ কমাচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মোবাইল সংযোগ ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং ডাটা ব্যবহার চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে এ সময় অপারেশনাল কার্বন নিঃসরণ ৮ শতাংশ কমেছে। সম্প্রতি জিএসএমএর মোবাইল িনট জিরো প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর টেকরাডার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল শিল্প পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। তবে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নিট জিরো গোল’ (এমন একটি অবস্থা যেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ ও শোষণের পরিমাণ সমান হয়) অর্জনে বা পরিবেশে নির্গত কার্বন গ্যাসের মোট পরিমাণকে শূন্য করার চেষ্টায় এখনকার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দ্রুত গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে। জিএসএমএর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোবাইল শিল্পে ডাটা ব্যবহার ও গ্রাহকসংখ্যা বাড়া সত্ত্বেও কার্বন নিঃসরণ বাড়েনি। অন্যদিকে ২০১৯ থেকে চার বছরে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ৪ শতাংশ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্য মেনে চলতে হলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কার্বন নিঃসরণ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমাতে হবে। নতুন তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোবাইল বাজার চীন মোবাইল অপারেটরদের কার্বন নিঃসরণ কমিয়েছে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে এ নিঃসরণ বেড়েছিল ৭ শতাংশ। চীনের মোবাইল কোম্পানিগুলো এখন আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে নবায়নযোগ্য শক্তি (যেমন সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি) ব্যবহার করছে। ফলে তাদের কার্বন নিঃসরণ বা পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমেছে।
জিএসএমএর জলবায়ু কর্মসূচির প্রধান স্টিভেন মুর বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগে মোবাইল শিল্পে বেশ অগ্রগতি লক্ষণীয়। তবে কার্বন নিঃসরণ কমলেও নিট জিরো গোল পূরণে নিঃসরণ কমানোর গতি দ্বিগুণ করতে হবে। ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপ ও বিশেষ করে চীনে এ ক্ষেত্রের অগ্রগতি বাড়ছে। কিন্তু সফলতার জন্য প্রয়োজন স্পষ্ট ও সুসংগঠিত নীতি, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব শক্তিতে সহজ প্রবেশাধিকার এবং শিল্পের মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা।’
প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে ‘স্কোপ ৩’ নিঃসরণে, যা সরবরাহ চেইন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। মোবাইল শিল্প বা টেলিকম খাতে কার্বন গ্যাস নিঃসরণ হয়, তার সবচেয়ে বড় অংশ আসে স্কোপ ৩ থেকে।
ভোক্তাদের আচরণেও পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পরিবেশবান্ধব মোবাইল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে। জিএসএমএ পরিচালিত একাধিক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী টেকসই ও সহজে মেরামতযোগ্য ডিভাইসকে অগ্রাধিকার দেন। প্রায় অর্ধেক ক্রেতা পুরনো মেরামতকৃত (রিফারবিশড) ফোন কেনার কথা ভাবেন। রিফারবিশড ডিভাইস নতুন মডেলের তুলনায় ৮০-৯০ শতাংশ কম নিঃসরণ তৈরি করে। ফলে এ খাতের পরিবেশগত প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দ্বিতীয়বার ব্যবহৃত ফোনের বাজার। এছাড়া অনেক মোবাইল অপারেটরও এখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নানা পরিকল্পনা তৈরি করছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন