ইউরোপে তৈরি পোশাক রফতানিতে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ০৮ Jul ২০২৫, ০৮:৪২ অপরাহ্ন

ইউরোপে তৈরি পোশাক রফতানিতে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

  • ১৫/০৬/২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা চীন, ভারত, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ। এ সময় বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে। যেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ইউরো। এ হিসাবে এক বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ইউরো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান বিষয়ক দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে চীনের পর ইইউতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। আলোচ্য সময়ে চীন ইউরোপে ৭ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ইউরো বেশি। তবে প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোর হিসাবে বাংলাদেশই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ইউরোস্ট্যাটের প্রতিবেদনে মাসভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইইউতে ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারিতে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮ শতাংশ, মার্চে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ ও এপ্রিলে ছিল ৬ শতাংশ। রফতানিকারকদের মতে, জানুয়ারিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০২৪ সালের শেষ ভাগের কিছু অর্ডার ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চালান করা, বছরের শুরুতেই ইউরোপের খুচরা বিক্রেতাদের বড় আকারের অর্ডার এবং সম্ভাব্য বাজার ও লজিস্টিক ঝুঁকির কারণে কিছু অর্ডার আগেভাগে পাঠানো।
ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাক আমদানি সামগ্রিকভাবে ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৩০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। এর আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশ ও চীন মিলে এ অতিরিক্ত আমদানির ৭০ শতাংশের বেশি জোগান দিয়েছে। চীনের রফতানি ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ইউরো, যেখানে আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ইউরো। এ সময়ে তুরস্কের অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল ছিল; দেশটির রফতানি ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ইউরোতে নেমে এসেছে, যেখানে ২০২৪ সালে এ অংক ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ইউরো।
অন্যদিকে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশও ভালো প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। ভারতের রফতানি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ইউরো। ভিয়েতনামের রফতানি ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ইউরোতে। এছাড়া পাকিস্তানের রফতানি ২৫ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ইউরো। এদিকে কম্বোডিয়া সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেশটি ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২৪ সালের ১ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ইউরো থেকে রফতানি বাড়িয়ে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে চাহিদা পুনরুদ্ধার, প্রতিযোগী মূল্যে পণ্য সরবরাহ ও দক্ষ উৎপাদন ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আবারো শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ ধারা ধরে রাখতে উৎপাদন সক্ষমতা, পরিবেশগত মানদণ্ড ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন। এদিকে ইউরোপ ছাড়াও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বেড়েছে। গত দুই বছরে দেশটি গড়ে ৭৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করা উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি–এপ্রিল) মার্কিন পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের পরিসংখ্যানে এ চিত্র উঠে এসেছে। জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এ হিসাবে ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হিসাবে বাংলাদেশের পরই রয়েছে ভারত। আলোচ্য সময়ে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ কোটি ৯ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us