বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প

  • ১৪/০৬/২০২৫

বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে। ভারত সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে প্রস্তুত পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্যে আমদানি সীমিত করেছে। এর আগে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করে। বাংলাদেশ থেকে পুরাতন পোশাক বা ঝুট কাপড় সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্পে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশটির বৃহত্তম টেক্সটাইল রিসাইক্লিং কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পানিপথ, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন ঝুট কাপড় রিসাইক্লিং হয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভারতের রিসাইক্লিং শিল্পে ব্যবহহৃত ঝুট কাপড়ের সবচেয়ে বড় উৎস বাংলাদেশ, সম্প্রতি এর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
অথচ মে মাসে ভারত সরকার সীমান্তপথে পোশাক আমদানিতে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, সেখানে ঝুট কাপড় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পানিপথের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন যে বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড়ের চালান বন্ধ রয়েছে। তবে কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।’ ব্যবসায়ীরা বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা করছেন।
বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস উত্তর-পূর্ব ভারতে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্প্রসারণের আহ্বান জানানোর পর দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি করে, যা পানিপথের ১৫০-২০০ মিলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো থেকেও পরিত্যক্ত পোশাক আসে, তবে বাংলাদেশের ঝুট কাপড় সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের রিসাইক্লিং শিল্পের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত।
রপ্তানি স্থগিতাদেশের সময়কালটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশ বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি+ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ সুবিধা পেলে দেশের ৬৬ শতাংশের বেশি রপ্তানিপণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার পাবে। তবে ২০২৬ সালে এলডিসি মর্যাদা হারানোর পর এসব সুবিধা বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জিএসপি+ সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রিসাইক্লিং সক্ষমতা বাড়ানোসহ শ্রম ও শাসনব্যবস্থায় উন্নয়ন আনতে হবে। রয়টার্স-এর তথ্যমতে, স্থানীয় রিসাইক্লিং খাত শক্তিশালী হলে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় সাশ্রয় করতে পারবে।
অন্যদিকে, ভারতসহ অন্যান্য দেশও টেক্সটাইল রিসাইক্লিং খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ভারত বছরে প্রায় ৪.৭ মিলিয়ন টন বা ৬০ শতাংশ টেক্সটাইল বর্জ্য রিসাইক্লিং করে। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে। ভারত সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে প্রস্তুত পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্যে আমদানি সীমিত করেছে। এর আগে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করে।
বাংলাদেশও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় সুতা শুধু সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি দেয়, যদিও স্থলপথে তা দ্রুত ও কম খরচে আনা যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, কেননা এই শিল্প ভারতীয় সুতা আমদানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্য ছিল ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভারতের সুতা ও হ্যান্ডলুম রপ্তানি ছিল ২.৩৯ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে ভারত প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us