৬১ শতাংশ খনিজের মালিক চীন, এটাই যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা – The Finance BD
 ঢাকা     শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

৬১ শতাংশ খনিজের মালিক চীন, এটাই যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা

  • ০৪/০৬/২০২৫

বিশ্বের ৬১ শতাংশ বিরল খনিজ চীন থেকে খনন হয়, আর প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে চীনের নিয়ন্ত্রণ ৯২ শতাংশ পর্যন্ত। এক সময় শুধু প্রযুক্তি আর গবেষণার ল্যাবে আলোচনায় থাকলেও, বর্তমানে বিরল খনিজ পরিণত হয়েছে ভূরাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে এ খনিজই হয়ে উঠেছে নতুন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রীনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘খুব প্রয়োজন’ বলে দাবি করেন। মূলত এই বরফঢাকা দ্বীপটি শুধু কৌশলগতভাবে নয়, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ বলেও যুক্তরাষ্ট্রের নজরে। শুধু তাই নয় প্রয়োজন মেটাতে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের সঙ্গেও একটি বিরল খনিজ চুক্তি করেছে।
বিরল খনিজ নিয়ে এই উত্তেজনা নতুন নয়। চীন দীর্ঘদিন ধরেই এই খাতের ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে, যা তাদের শিল্পনীতি ও বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের কৌশলের অংশ। বিরল খনিজ নামে পরিচিত ১৭টি ধাতব উপাদান, এদের মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম ও লান্থানাইড সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। এগুলো মূলত ব্যবহৃত হয় স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, উইন্ড টারবাইন, এলইডি লাইট, ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি, এমনকি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও ক্যানসার চিকিৎসায়। কিন্তু এ উপাদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্ভবত সামরিক খাতে। যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, স্যাটেলাইট, লেজার অস্ত্র কিংবা টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র—সবখানেই এই খনিজ অপরিহার্য।
বিরল নামে পরিচিত হলেও এই উপাদান পৃথিবীর অনেক অংশেই পাওয়া যায়—এমনকি সোনার থেকেও বেশি পরিমাণে। তবে সমস্যা হলো, এগুলো খুঁজে বের করা, আলাদা করা ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়বহুল। এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে চীন। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বের ৬১ শতাংশ বিরল খনিজ চীন থেকে খনন হয়, আর প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে চীনের নিয়ন্ত্রণ ৯২ শতাংশ পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি মাত্র খনি রয়েছে যা বিরল খনিজ উত্তোলন করে। কিন্তু উত্তোলনের পর ভারী উপাদানগুলো এখনো প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই বললেই চলে। তাই প্রক্রিয়াজাত করতে আগে এসব চীনেই পাঠানো হতো। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করার পর থেকে সম্পর্ক জটিল হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের এ নির্ভরশীলতাকে রাজনৈতিক চাপ হিসেবে ব্যবহার করছে। এপ্রিলে দুই দেশ যখন এক ধরনের বাণিজ্য সমঝোতায় পৌঁছায়, তখন ধারণা ছিল চীন বিরল খনিজ পদার্থ রফতানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবে। কিন্তু মে মাসে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, চীন সমঝোতা ভঙ্গ করে সাতটি বিরল খনিজের রফতানিতে আগের মতোই কড়াকড়ি রাখছে।
এই রফতানি নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধাক্কা। ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরল খনিজের ৭০ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র এখন নতুন উৎসের খোঁজে নজর দিয়েছে ইউক্রেন, গ্রীনল্যান্ড ও সৌদি আরবের দিকে। কিন্তু ইউক্রেনে খনিজ খাত এখনো অপরিণত, এমনকি কোথায় কী পরিমাণ খনিজ পাওয়া যাবে, সে মানচিত্রও এখনো পরিষ্কার নয়। বিশ্বায়নের যুগে যুদ্ধের ধরন পাল্টেছে। প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষায় এখন যারা যত সমৃদ্ধ তারাই তত শক্তিশালী। এ পরিস্থিতিতে চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই মৌলিক অস্ত্র এখন যুক্তরাষ্ট্রের চোখে পরিণত হয়েছে সম্ভাব্য দুর্বলতার উৎসে।
সিএনএন অবলম্বনে

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us