চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শক্তিশালী ফলাফলের পর বিশ্বব্যাপী পিসি বিক্রির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি)। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির প্রভাবে বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরির মধ্যেও ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৭ কোটি ইউনিটের বেশি পিসি বিক্রির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। তবে আইডিসি বলছে, বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় এবং ২০২৫ সালের ইতিবাচক ফলাফলের কারণে আগামী বছর প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে যেতে পারে। আইডিসির ওয়ার্ল্ডওয়াইড পিসি ট্র্যাকারসের রিসার্চ ভাইস প্রেসিডেন্ট জিন ফিলিপ বুচার্ড বলেন, ‘এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৯০ দিনের জন্য ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ওপর শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর কী হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তাই যতদিন ছাড় আছে, ততদিন বেশি পরিমাণে যুক্তরাষ্ট্রে পিসি পাঠানোকে গুরুত্ব দিচ্ছে নির্মাতারা।’
তিনি জানান, সুযোগ বুঝে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গত প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পিসি মার্কিন বাজারে বিক্রি করেছে। এতে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শুল্ক বা খরচ বাড়ার আগে তারা লাভবান হতে পারছে। তবে এমন প্রবণতা স্বল্পমেয়াদে পিসি বাজারকে চাঙ্গা করলেও ভবিষ্যতে শুল্কের প্রভাব বড় জটিলতা তৈরি করতে পারে। আইডিসি এ বিষয়ে সতর্ক করে বলছে, চলতি বছর দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বব্যাপী এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তাদের আস্থার ঘাটতি পিসি বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবহারকারী এখনো উইন্ডোজের পুরনো সংস্করণ থেকে উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করছে। ফলে নতুন কম্পিউটার কেনার বাড়তি চাহিদা (বিশেষ করে অফিস বা ব্যবসার জন্য) এখনো চলমান। কারণ অনেক সময় উইন্ডোজ ১১ চালাতে নতুন হার্ডওয়্যার বা পিসির প্রয়োজন হয়।
আইডিসির ডিভাইস রিসার্চ বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ম্যানেজার মালিনি পল জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান বাজেটসংক্রান্ত চাপের মুখে রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার পিসি বাজার ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) ও তার পরেও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে উইন্ডোজ ১০-এর সাপোর্ট শেষ হওয়া (অপারেটিং সিস্টেমের জন্য নতুন আপডেট বা কারিগরি সহায়তা বন্ধ করে দেয়া) ও কভিড মহামারী সময়ে কেনা পুরনো সব কম্পিউটার বদলানোর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি। এদিকে টানা কয়েক প্রান্তিকের মন্দা কাটিয়ে ২০২৪ সালের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ফিরে আসে বৈশ্বিক পিসির বাজারে। তবে গত বছর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আবারো বিক্রি কমে যায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বাজারসংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা ছিল, শুল্ক বাড়ার ফলে চলতি বছর থেকে শুরু করে সামনের দিনে ভোক্তাদের জন্য পিসি কেনা আরো ব্যয়বহুল হবে। ফলে তারা কম্পিউটার কেনার তুলনায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য কেনায় অগ্রাধিকার দেবে। এছাড়া একই কারণে ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলো বিশেষভাবে চাপের সম্মুখীন হবে। প্রথম প্রান্তিকে পিসি বিক্রির ফলাফল প্রকাশের পর বিশ্লেষকরা গত মাসে বলছিলেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবহারকারী ও প্রতিষ্ঠান নতুন হার্ডওয়্যার বা আপগ্রেডে বিলম্ব করতে পারে। ফলে উইন্ডোজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়াসহ কর্মক্ষমতায় বাধা তৈরি হতে পারে। তবে এর মধ্যেই আইডিসি বলছে ভিন্ন কথা। চলতি বছর বিশ্বব্যাপী পিসি বিক্রিতে আশাবাদী মনোভাব রাখছে সংস্থাটি।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন