বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গরুর মাংস সরবরাহ করে যে ৩ দেশ – The Finance BD
 ঢাকা     শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গরুর মাংস সরবরাহ করে যে ৩ দেশ

  • ২৯/০৫/২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট গরুর মাংসের ২০% সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকা ব্রাজিল সরবরাহ করে ১৯%, আর চীন সরবরাহ করে প্রায় ১৩%। গরুর মাংস বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাদ্য। আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা -এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে গত কয়েক দশক ধরে সব ধরনের মাংস খাওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ব্রাজিল- এই তিন দেশ বিশ্বে শীর্ষ গরুর মাংস উৎপাদনকারী। তবে আর্জেন্টিনা বিশ্বের শীর্ষ গরুর মাংস উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় না থাকলেও; মাথাপিছু গরুর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান শীর্ষে। দেশটির প্রতি ব্যক্তি বছরে গড়ে ১০০ পাউন্ডের কিছু বেশি গরুর মাংস খায়। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের সর্বাধিক গরুর মাংস সরবরাহকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। এর ঠিক পরেই রয়েছে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট গরুর মাংসের ২০% সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকা ব্রাজিল সরবরাহ করে ১৯%, আর চীন সরবরাহ করে প্রায় ১৩%। সব মিলিয়ে, এই তিন দেশ বিশ্বের মোট গরুর মাংস উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি অংশের জোগান দেয়। ইউএসডিএ আরও জানায়, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে গরুর মাংস উৎপাদনের হার গড়ে প্রতি বছর ০.৭১% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মানে, এই ১০ বছরে বার্ষিক গড় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৮.২১ মিলিয়ন মেট্রিক টন।

গরুর মাংস সরবরাহের রাজা যুক্তরাষ্ট্র

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববাজারে ১ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন গরুর মাংস সরবরাহ করেছে। ২০১৫ সালে এ পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮ লাখ মেট্রিক টন। এক মেট্রিক টন মানে ২,২০৪ পাউন্ড — সেই হিসাবে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যে গরুর মাংস সরবরাহ করেছে, তার মোট ওজন দাঁড়ায় ২৭ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইউএসডিএ’র আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত বিপুল পরিমাণ সরবরাহ সত্ত্বেও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ উৎপাদিত কৃষিপণ্যের তালিকায় গরুর মাংস নবম স্থানে ছিল। এ তালিকার শীর্ষে ছিল বাদাম (আমন্ড), পুরো পৃথিবীতে যত বাদাম উৎপাদিত হয়, তার ৭৭% যুক্তরাষ্ট্র একাই উৎপাদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ২৭ মিলিয়নের বেশি গরুর মাংস উৎপাদনকারী গরু, যাদের বেশিরভাগই শস্যভিত্তিক খাদ্য খায়। গবাদি পশু উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে টেক্সাস রাজ্য, এরপর রয়েছে ওকলাহোমা ও মিসৌরি। ইউএসডিএ’র ২০২৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, শুধুমাত্র টেক্সাসেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মোট গরুর প্রায় ১৪%, যেখানে ওকলাহোমায় রয়েছে এর অর্ধেকেরও কম — মাত্র ৫%। টেক্সাস লংহর্ন গরু যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী খামারজীবনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত হলেও, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি যে গরু থেকে গরুর মাংস উৎপাদন হয় তা হলো ব্ল্যাক অ্যাঙ্গাস জাতের গরু।

দেশটির মোট গরুর সংখ্যা ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২% কমে গেছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। তবে ২০২৪ সালে একজন মার্কিন নাগরিক গড়ে ৫৯ পাউন্ড গরুর মাংস খেয়েছেন, যা ২০২৩ সালের চেয়ে কিছুটা বেশি এবং গত পাঁচ বছরের গড়ের চেয়েও সামান্য বেশি। নিজ দেশের গরুর মাংসপ্রেমী জনগণের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মেক্সিকো, চীনসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে গরুর মাংস রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্র।

গরুর মাংস উৎপাদনে এগিয়ে ব্রাজিল, তবে এর পরিবেশগত মূল্য চড়া

বিশ্বজুড়ে সুস্বাদু স্টেকের জন্য পরিচিত ব্রাজিল ২০২৪ সালে ১ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন গরুর মাংস উৎপাদন করেছে। মাত্র এক দশক আগেও দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি ৯.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাংস সরবরাহ করত। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর মাংস উৎপাদনকারী দেশ হলেও, চীনের পরে ব্রাজিল থেকে সবচেয়ে বেশি গরুর মাংস কেনে যুক্তরাষ্ট্রই। ২০২৪ সালে ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ছয়টি কৃষিপণ্যের মধ্যে একটি গরুর মাংস। তবে এর অবস্থান কমলার জুসের চেয়ে অনেক পেছনে, কারণ ব্রাজিল একাই বিশ্বজুড়ে ৭০% কমলা জুস উৎপাদন করে [তথ্যসূত্র: ইউএসডিএ]।

তবে এই বিপুল গরুর মাংস উৎপাদনের গুরুতর পরিবেশগত প্রভাবও রয়েছে। ব্রাজিলে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট — আমাজন বন। এই বন ধ্বংসের পেছনে প্রধান কারণগুলোর একটি হলো গরুর খামার স্থাপন। এমনকি ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে মূলত গবাদি পশু পালনের জন্যই ব্রাজিল সরকার আমাজন বন উজাড়ে প্রণোদনা দিয়েছে।

যদিও দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে গরু পালন আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, তবে বিশ্বব্যাপী গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন আমাজনের গভীর এলাকাগুলোতেও গবাদি পশু পালন ছড়িয়ে পড়েছে, যা পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

সয়াবিনের মতো সয়াবিন উৎপাদনের পাশাপাশি গবাদি পশুর খামার স্থাপনও আমাজন রেইনফরেস্টের ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে এনেছে।

তবে আশার কথা হলো, গত দুই দশকে ব্রাজিলে কিছু নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যার ফলে গরু পালনের জন্য বন উজাড় কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন কিছু ভূমিতে গরুর খামার স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং খামার ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশের ওপর প্রভাব কমানোর চেষ্টা চলছে।

নিজেদের গরুর মাংস উৎপাদনে চাহিদা মিটছে না চীনের

যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের তুলনায় কম হলেও, ২০২৪ সালে চীন ৭.৭৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন গরুর মাংস বিশ্ববাজারে সরবরাহ করেছে। বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বৃহত্তম গরুর মাংস উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও, চীনের শীর্ষ ১০ উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মধ্যে গরুর মাংস নেই। ইউএসডিএ’র তথ্যমতে, ২০২৪ সালে চীন বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি পেয়ারাসহ বিভিন্ন সাইট্রাস ফল—যেমন গ্রেপফ্রুট, কমলা, মালটা ও টেঞ্জারিন প্রভৃতি সরবরাহ করেছে। এসব ফলই চীনের রপ্তানিযোগ্য খাদ্যপণ্যের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বড় আকারের খামারের বদলে চীনের গরুর মাংস উৎপাদনের একটি বড় অংশ আসে ছোট ছোট খামার থেকে।

ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন জানিয়েছে, চীনে গরু সরবরাহকারী ৯০% খামার বছরে মাত্র ৯টির বেশি গরু জবাই করে না। তবুও এই ক্ষুদ্র খামারগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন চীনের মোট গরুর মাংসের অর্ধেকেরও বেশি জোগান দেয় — যা একক ব্যক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে বড় কারখানার বদলে অসংখ্য ছোট খামার অংশ নেয়।

প্রতি বছর ক্রমে চীনে গরুর মাংস খাওয়ার পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু দেশটি নিজস্ব চাহিদা পূরণের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন করতে পারছে না। তাই তার ১.৪ বিলিয়ন মানুষের চাহিদা মেটাতে; ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুর মাংস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় চীন। এর ফলে চীন দ্রুতই বিশ্বের অন্যতম বড় গরুর মাংস আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।

চীনের মানুষের জীবনমান উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গরুর মাংসের চাহিদাও বাড়ছে।

ইউএসডিএ জানিয়েছে, এসব মাংসের চাহিদা যদিও বেড়েই চলেছে, তবে চীনে গরুর মাংস [এবং শুকরের মাংস] উৎপাদন আগামীতে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us