যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১০:৫১ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি

  • ১৫/০৫/২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা মার্কিন ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রিয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি একটি বৃহত্তর ৬০০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ প্যাকেজের অংশ, যা প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে বিস্তৃত। চুক্তি সইয়ের পর মঞ্চে এক বক্তব্যে ট্রাম্প সৌদি যুবরাজকে ‘বিস্ময়কর’ মানুষ বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধন এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী।’
উপসাগরীয় অঞ্চলের ধনী আরব দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আশা নিয়ে মঙ্গলবার ট্রাম্প সৌদি আরব সফরে যান। এই সফরে ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য অর্থনৈতিক চুক্তি, গাজা যুদ্ধ বা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা নয়। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। অস্ত্রচুক্তি দীর্ঘদিন ধরেই দেশ দুটির এই কৌশলগত অংশীদারত্বের অংশ হয়ে আছে। কিন্তু ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন ইয়েমেনে ছড়িয়ে পড়া ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকার কারণে দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেছিল।
২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড ঘিরে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যে ওই হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের হাত থাকার খবর বেরিয়ে এসেছিল। তবে বিন সালমান এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০১৯ সালে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী থাকার সময় সৌদি আরবকে একঘরে করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তারপরও বাইডেনের আমলে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছিল।
গত বছর থেকে আবার সৌদি আরবে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র বিক্রি শুরু হয়। আর এবার ট্রাম্পের আমলে সৌদি আরবের সঙ্গে ওই ঐতিহাসিক চুক্তি হলো। ট্রাম্প এ চুক্তির পর এক ভাষণে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব আজ তাদের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে।’ বক্তব্যে ট্রাম্প আরও কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে সিরিয়া, ইরান ও গাজা-ইসরায়েল প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন। সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে চান বলে জানান তিনি।
এদিকে গাজাবাসীদের আরও ভালো একটি ভবিষ্যৎ দরকার বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘কিন্তু গাজার নেতারা সাধারণ মানুষকে অপহরণ, নির্যাতন ও হামলার নিশানা করা বন্ধ না করা পর্যন্ত সেটি ঘটবে না।’ এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আঞ্চলিক হুমকির প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে এই চুক্তি ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, কারণ সৌদি আরবের এফ-৩৫ জেট ক্রয়ের আগ্রহ ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরবের মধ্যে এই ঐতিহাসিক অস্ত্র ও বিনিয়োগ চুক্তি শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশই তাদের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চায়, যদিও এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us