জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল থাবা, অতিরিক্ত পর্যটনের চাপ, আর স্থানীয় জনসংখ্যার ক্রমাগত হ্রাস মিলিয়ে ভেনিস এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় গত দেড়শ বছরে ২০ সেন্টিমিটার নেমে গেছে ভেনিস। পানির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ইতালির ছোট্ট শহর-ভেনিস। দেখে মনে হয়, পানির উপরে হাওয়ায় ভেসে আছে শহরটি। হঠাৎ করেই জোরে আসা কোনো ঢেউয়ের আঘাতে হয়তো আবার ভেসে চলে যাবে অন্য কোন প্রান্তে। পুরো শহরের বুক জুড়ে থাকা পানিতে নান্দনিক প্রাসাদগুলোর প্রতিচ্ছবির সঙ্গে সঙ্গে আকাশের মেঘেরাও লুটোপুটি খায়। পানির ওপর ভেসে থাকা দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, তার গা ঘেঁষে একে-বেঁকে বয়ে চলা স্বচ্ছ লেকের জন্য এর খ্যাতি ভুবনজোড়া। সারাবছরই পর্যটক মুখর থাকে রোমান্টিক এই নগরী। বছরে প্রায় ৩ কোটি মানুষ ভেনিসে ভ্রমণ করে। শহরটির শিল্প-সাহিত্য, বিশেষ করে স্থাপত্যশিল্পে যে কারও মন জুড়িয়ে যায়। প্রতিটি বাড়িই যেন একেকটি নান্দনিক স্থাপত্য, রঙ-বেরঙের কারুকার্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জলের মধ্যে। ভেনিস নগরটি মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি। ইতিহাস থেকে জানা যায়- জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাসমান এই শহরটি গড়ে উঠেছিল।
তবে ভাসতে থাকা শহরটি ডুবতে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল থাবা, অতিরিক্ত পর্যটনের চাপ, আর স্থানীয় জনসংখ্যার ক্রমাগত হ্রাস মিলিয়ে ভেনিস এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় গত দেড়শ বছরে ২০ সেন্টিমিটার নেমে গেছে ভেনিস। ভেনিসের অস্তিত্ব মূলত জলনির্ভর — এর খাল, গন্ডোলা আর জলপথের ইতিহাস শতাব্দী পেরিয়েছে। কিন্তু সেই জলই আজ এর সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন জলোচ্ছ্বাস আর অপরিকল্পিত খননের ফলে শহরটির মাটি ও ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২০০০ সাল থেকে ভেনিসে জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে শহরটি পানির নিচে ডুবে যেতে পারে। তবে শুধু জল নয়, ভেনিস তলিয়ে যাওয়ার পেছনে আর একটি কারণ অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ। অধিকাংশ পর্যটক দিনভিত্তিক ভ্রমণকারী হওয়ায় শহরের অবকাঠামোর উপর চাপ সৃষ্টি হলেও স্থানীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান নগণ্য। বাসস্থান সংকট, পরিবেশ দূষণ ও সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে দ্রুতগতিতে। খালপথে পর্যটকদের নৌকা চলাচলের ফলে সৃষ্টি হওয়া ঢেউ শহরের প্রাচীন ভবন ও খালপথকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। ভেনিসের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে পর্যটন নির্ভরতা ও অতিরিক্ত চাপের কারণে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন