প্রযুক্তি দুনিয়ায় ছাঁটাইয়ের ঢেউ থামছেই না। চলতি বছরের মধ্যে এপ্রিলেই এ খাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।প্রযুক্তি দুনিয়ায় ছাঁটাইয়ের ঢেউ থামছেই না। চলতি বছরের মধ্যে এপ্রিলেই এ খাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। গত মাসে বিশ্বজুড়ে ১৯টি কোম্পানি থেকে চাকরি হারিয়েছেন ২৩ হাজার ৪৬৮ কর্মী। এ সংখ্যা মার্চের তুলনায় অনেক বেশি। মার্চে ২১টি কোম্পানি মিলে ৮ হাজার ৮৩৪ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছিল। গত মাসে সবচেয়ে বড় ছাঁটাইয়ের ঘোষণা এসেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট ইন্টেল থেকে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা মোট কর্মীর প্রায় ২০ শতাংশ ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। খবর দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে জানা যায়, প্রযুক্তি জায়ান্ট ইন্টেল ২০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করছে। অতিরিক্ত জনবল কমিয়ে এনে ব্যবস্থাপনা সহজ ও কার্যকর করাই এ সিদ্ধান্তের লক্ষ্য। পদক্ষেপটি ইন্টেলের নতুন সিইও লিপ-বু টানের অধীনে প্রথম বড় কাঠামোগত পরিবর্তন। তিনি গত মাসেই দায়িত্ব নিয়েছেন। ছাঁটাই প্রসঙ্গে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিটি নতুন করে প্রযুক্তিনির্ভর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায়। গত বছর আগস্টেও ইন্টেল ১৫ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছিল। এআই চিপে বড় অংকের বিনিয়োগের পরও ইন্টেল প্রতিদ্বন্দ্বী এনভিডিয়া থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়।
২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতার কর্মী সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯০০, যা ২০২৩ সালের ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ থেকে অনেকটাই কম। এদিকে মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটা গত মাসে রিয়ালিটি ল্যাবস বিভাগ থেকে প্রায় ১০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে। বিভাগটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) ও ওয়্যারেবল ডিভাইস তৈরির কাজ করে। ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা মূলত মেটার কোয়েস্ট হেডসেটের জন্য ভিআর ও এআর গেম তৈরি করতেন। মেটা জানিয়েছে, ভবিষ্যতের মিক্সড রিয়ালিটি অভিজ্ঞতাকে আরো কার্যকর করতে কিছু টিমে কাঠামো ও ভূমিকার পরিবর্তন হয়েছে।
এছাড়া এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্লাটফর্মস অ্যান্ড ডিভাইস বিভাগ থেকে শত শত কর্মী ছাঁটাই করেছে টেক জায়ান্ট গুগল। বিভাগটি অ্যান্ড্রয়েড, পিক্সেল ফোন, ক্রোম ব্রাউজার ও অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা করে। জানুয়ারিতে কর্মীদের স্বেচ্ছায় অবসরের প্রস্তাব দেয়ার পরই ছাঁটাইয়ের এ খবর সামনে আসে। গুগলের এক মুখপাত্র জনবল ছাঁটাই নিয়ে বলেন, ‘প্লাটফর্মস ও ডিভাইসেস টিম একীভূত হওয়ার পর কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কারণে স্বেচ্ছায় প্রস্থানের পাশাপাশি কিছু বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করতে হয়েছে।’
প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডাটা সেন্টারে বেশি বিনিয়োগ করছে। ফলে অন্যান্য খাতে ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে। তবে কর্মী ছাঁটাইয়ের সবচেয়ে দৃশ্যমান কারণ হলো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যস্ফীতির শঙ্কা। এমন অবস্থায় কোম্পানিগুলো খরচ কমাতে ও বাজারে টিকে থাকতে সতর্ক ও সুনির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে কর্মী ছাঁটাইকে তারা একটি সহজ সমাধান হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে ইন্টেলের মতো হার্ডওয়্যার কোম্পানিগুলোর চাহিদা কমে যাওয়ায় তারা অগ্রাধিকার পরিবর্তন করে কর্মী কমিয়ে ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাঁটাইয়ের আরেকটি বড় কারণ হলো উচ্চ সুদের হার। ঋণ নেয়া বা পুঁজি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ায় কোম্পানিগুলো খরচ কমানোর পথে হাঁটছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ কম আলোচিত কারণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। প্রকাশ্যে না বললেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এআই প্রযুক্তিতে বিপুল বিনিয়োগ করছে। ফলে মার্কেটিং, গ্রাহক সহায়তা ও ডাটা বিশ্লেষণের মতো অনেক প্রচলিত কাজ এআই অটোমেশনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন