অফশোর উইন্ড ফার্মগুলোর মধ্যে রহস্যময় প্রতিযোগিতা – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

অফশোর উইন্ড ফার্মগুলোর মধ্যে রহস্যময় প্রতিযোগিতা

  • ০৮/০৫/২০২৫

যখন বিশাল টারবাইনগুলো বাতাস থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, তখন বাতাসের গতি কমে যায়। আর প্রকল্পের পেছনে তৈরি হয় এক ধরনের ফেক ইফেক্ট বা বায়ুশূন্য স্থান। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটি কয়েক কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। বিশ্বজুড়ে যখন অফশোর (সমুদ্রের মধ্যে) উইন্ড ফার্ম বা বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো দ্রুত বাড়ছে, তখন এক অজানা সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছ। বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক প্রকল্প অন্য প্রকল্পের হাওয়া ‘চুরি’ করছে। খবর বিবিসি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যখন বিশাল টারবাইনগুলো বাতাস থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, তখন বাতাসের গতি কমে যায়। আর প্রকল্পের পেছনে তৈরি হয় এক ধরনের ফেক ইফেক্ট বা বায়ুশূন্য স্থান। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটি কয়েক কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ফলে এক প্রকল্পের পেছনে থাকা আরেকটি প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ শতাংশ বা তারও বেশি কমে যেতে পারে।
ডাচ বায়ু বিদ্যুৎ কোম্পানি হুইফলের গবেষক পিটার বাস বলেন, ‘উইন্ড ফার্ম বাতাস থেকে শক্তি উৎপাদন করে। কিন্তু এর ফলে বাতাসের গতি কমে যায়। আর সেই কম গতির বাতাস পেছনের প্রকল্পের ক্ষতি করে।’ এ সমস্যাকে কেউ কেউ মজা করে ‘হাওয়া চুরি’ বললেও আইনত কেউ বাতাসের মালিক নয়। কিন্তু এতে বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কারণ কোটি কোটি ডলার খরচ করে তৈরি করা এক প্রকল্পে যদি আশানুরূপ বিদ্যুৎ না আসে, তাহলে আর্থিক ক্ষতি হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বণ নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ইউরোপ, বিশেষ করে নর্থ সি ও বাল্টিক সাগর অঞ্চলে হাজার হাজার নতুন টারবাইন বসানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু যত বেশি প্রকল্প তৈরি হচ্ছে, তত বেশি এরা পরস্পরকে প্রভাবিত করছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারের গবেষক পাবলো উরো বলেন, ‘এখন আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে প্রকল্পগুলো একে অপরের খুব কাছে হচ্ছে। আর সে কারণে ফেক ইফেক্ট বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’ পরিবেশবিদরা বলছেন, এতে একই দেশের মধ্যে প্রকল্পগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। আর ভবিষ্যতে এক দেশের প্রকল্প আরেক দেশের প্রকল্পের ক্ষতি করলে আন্তর্জাতিক বিরোধ তৈরি হতে পারে। সেই সঙ্গে সবাই যদি সেরা অবস্থানগুলো দখলের জন্য হুড়োহুড়ি করে, তাহলে পরিবেশগত ও পরিকল্পনাগত দিকগুলো অবহেলিত হতে পারে। গবেষক আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। সামুদ্রিক তেল বা মাছ ধরার মতো ভাগ করা সম্পদের ক্ষেত্রে যেমন নিয়ম থাকে, তেমনি বাতাসের জন্যও নিয়ম প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এ ফেক ইফেক্ট নিয়ে আরো গবেষণার দাবি জানিয়েছেন তারা। গবেষণার মাধ্যমে জানতে হবে কত দূর পর্যন্ত ফেক ছড়ায়, প্রকল্পগুলোর মধ্যে কতটা ফাঁক রাখতে হবে আর বড় টারবাইনের প্রভাব কতটা বেশি। সমাধান প্রসঙ্গে পাবলো উরো বলেন, ‘আমরা যদি এ সমস্যার সমাধান না করি, তাহলে এটা বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। যা পুরো শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হবে। আমাদের দ্রুত, কিন্তু সঠিকভাবে এগোতে হবে।’
হাওয়া কারো ব্যক্তিগত সম্পদ না হলেও তা নিয়ে এখন বড় রকমের বিজ্ঞান, বিনিয়োগ আর আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার লড়াই শুরু হয়েছে। আর নেট জিরো লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এ সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান প্রয়োজন।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us