চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) মাছ রফতানিতে পতন দেখেছে জাপান। চার বছরের মধ্যে পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে খাদ্য, কৃষি, বনজ ও মৎস্যজাত পণ্যের রফতানি প্রথমবারের মতো কমেছে। জাপান সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চীনে মৎস্যজাত পণ্যের চালান কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রফতানিতে।
সম্প্রতি জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় পণ্যের রফতানি ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৭০ হাজার ১৩০ কোটি ইয়েন বা ৪৭৬ কোটি ডলার হয়েছে।
অবশ্য এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ইয়েনে পৌঁছেছে। রফতানির পরিমাণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ২০০৪ সালের পর প্রথমবারের মতো জাপান থেকে শীর্ষ খাদ্য আমদানিকারকে পরিণত হতে যাচ্ছে দেশটি।
একই সময়ে হংকংয়ে রফতানি ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ১০ হাজার ৩২০ কোটি ইয়েনে হয়েছে। তবে চীনের মূল ভূখণ্ডে রফতানি ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৭ হাজার ৮৪০ কোটি ইয়েন।
সুনামিতে বিধ্বস্ত ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিশোধিত বর্জ্য পানি গত বছরের আগস্টে সমুদ্রে ছেড়ে দেয় জাপান। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নানা বিতর্কের পর দেশটি থেকে সামুদ্রিক খাবার আমদানি বন্ধ করে দেয় বেইজিং। এ কারণে জানুয়ারি-জুনে চীনের মূল ভূখণ্ডে সামুদ্রিক পণ্যের রফতানি ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৯০ শতাংশের বেশি হ্রাস পায়, একই সময়ে হংকংয়ে রফতানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।
অবশ্য চীন ও হংকংয়ের বাইরের গন্তব্যগুলোয় জাপানে খাদ্য, কৃষি, বনজ ও মৎস্যজাত পণ্যের সামগ্রিক রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, রেস্তোরাঁয় চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ইয়েনের দুর্বল বিনিময় হারের সুযোগ নিয়ে আমদানি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে চালান বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে জাপান থেকে শেলফিশ জাতীয় স্ক্যালপের রফতানি কমেছে ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ চালানের বেশির ভাগই আগে চীনে যেত, সেখানে স্ক্যালপের খোসা ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে রফতানির জন্য প্রক্রিয়াজাত হতো। এখন জাপানে উৎস এমন সামুদ্রিক খাবারের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞার কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম বেড়েছে, যাতে সাহায্য করছে টোকিও। এ কারণে স্ক্যালপের রফতানি ভিয়েতনামে ৬ দশমিক ৮ ও থাইল্যান্ডে ২ দশমিক ৫ গুণ বেড়েছে।
অবশ্য মৎস্যজাত পণ্য খাদ্যের সামগ্রিক রফতানিকে প্রভাবিত করলেও বছরের প্রথমার্ধে জাপান থেকে মসলা, সবুজ চা ও চাল রফতানি শক্তিশালী অবস্থায় ছিল।
২০২৫ সালের মধ্যে খাদ্য, কৃষি, বনজ ও মৎস্যজাত পণ্য বার্ষিক ২ ট্রিলিয়ন ইয়েন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ইয়েনে রফতানি উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে জাপান সরকার। বার্ষিক রফতানি ১১তম বছর হিসেবে ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছিল। তবে চীন ও হংকংয়ে চালানের সংখ্যা কমে যাওয়া এ লক্ষ্য কিছুটা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
Source: নিক্কেই এশিয়া।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন