মানুষের কেনাকাটার অভ্যাসে অতিমারি যে বড় প্রভাব ফেলেছে, তা সকলে একবাক্যে স্বীকার করেন। এক দিকে যেমন তাঁদের চাহিদা বদলেছে, তেমনই স্বাস্থ্য সম্পর্কেও আরও সচেতন হয়েছেন আমজনতা। আর এই অভ্যাসের পরিবর্তন ছাপ ফেলছে সংস্থাগুলির ব্যবসায়িক পরিকল্পনাতেও। তবে এত সব সুবিধার মধ্যেই একটা বিষয় ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে। সেটা হল, ধার নিয়ে সাধারণ পণ্য কেনার প্রবণতা বৃদ্ধি। বহু ক্ষেত্রে সেই ঋণ শোধ করতে না পারায় খেলাপির সংখ্যা যে বাড়ছে তা-ই নয়, এতে মাথা তুলছে ব্যাঙ্কিং শিল্পে খুচরো ঋণের অনুৎপাদক সম্পদও।
শনিবার বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের সভায় টাটা ক্রোমার সদ্যপ্রাক্তন এমডি-সিইও অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘কোভিডের সময়ে মূলত ক্রেডিট কার্ডে বা ঋণ নিয়ে ফোন কেনা শুরু হয়েছিল। তার পরে তা টিভি, ফ্রিজ, এসির মতো পণ্যে ছড়িয়েছে। এ দিকে ধারে জিনিস কিনে বহু ক্রেতা ঋণ শোধ করতে না পারায় খেলাপি বাড়ছে। চাপে পড়ছে জোগান শৃঙ্খল।’’ তিনি জানান, দেশে ভোগ্যপণ্যের ৫৫-৬০ শতাংশই এখন ঋণ নিয়ে কেনা হয়। তার মধ্যে কমপক্ষে ৫০% ক্রেতার কাছেই কেনার সময়ে দাম মেটানোর পুরো টাকা থাকে না। ভোগ্যপণ্যে খেলাপি নিয়ে ইতিমধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সতর্কবার্তা জারি করেছে জানিয়ে অভিজিতের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি বদলাতে ভোগ্যপণ্য সংস্থা, খুচরো বিপণি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। হস্তক্ষেপ করতে হবে আরবিআই-কে।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদ ছিল খুচরো ঋণের ২.৩৫%। ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ২.৩%। সব রকম খুচরো ঋণ ধরলে আগে শুধু শিক্ষাঋণ (২.৭%)। উপরন্তু গত অর্থবর্ষে ফ্রিজ-টিভি কিনতে নেওয়া ৫০,০০০ টাকার কম ঋণের ১২ শতাংশের ক্ষেত্রেই সময়ে কিস্তি দিতে পারেননি ক্রেতা। ৬০ শতাংশের বেশি গ্রাহক একসঙ্গে তিনটি ঋণের বোঝা বইছেন। এর মধ্েয ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া কমপক্ষে ৩০ শতাংশের।
অনুষ্ঠানে আইটিসি-র কর্তা সুমন্ত ভার্গবনও এই ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “করোনার ফলে এমন অনেক পণ্য এনেছি, যা আগে ভাবা যায়নি। খুচরো ব্যবসা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে।” তিনি জানাচ্ছেন, বাড়ি বসে মুঠো ফোনে জিনিস অর্ডার দিয়ে দ্রুত পণ্য হাতে পাওয়ার সুবিধা মানুষকে ই-কমার্স ও কুইক কমার্সে উৎসাহী করেছে। উল্টো দিকে ক্রেতার চাহিদা, পছন্দ-বুঝে সেই মতো পণ্য আনতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর মতো প্রযুক্তির হাত ধরছে সংস্থাগুলিও। ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় অতিমারির প্রভাব তুলে ধরেন ওয়াও মোমো-র সিইও সাগর দারিয়ানিও। তবে সকলেরই চিন্তা সেই ঋণ নিয়ে জিনিস কেনার প্রবণতা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন