গাজায় ইসরায়েলের হামলা কেন্দ্র করে লোহিত সাগরনির্ভর সরবরাহ চেইন কয়েক মাস ধরে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ কারণে বিকল্প রুটে পণ্য পরিবহন করায় ভাড়া বাড়িয়েছে কনটেইনার জাহাজগুলো। এমন পরিস্থিতিতে অন্যতম সুফলভোগী কোম্পানি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কনটেইনার শিপিং গ্রুপ এপি মোলার-মায়েরস্ক, যার একটি চিত্র পাওয়া যাচ্ছে আয়ের সংশোধিত পূর্বাভাসে। গত মে মাস থেকে কোম্পানিটি তৃতীয়বারের মতো আর্থিক পূর্বাভাস সংশোধন করেছে।
ডেনমার্ক ভিত্তিক এ গ্রুপ গত সপ্তাহের শেষ দিকে জানিয়েছে, পুরো বছরে পরিচালন মুনাফা দাঁড়াতে পারে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারে। এর আগে জুনের পূর্বাভাসে পরিচালন মুনাফার অংক ছিল ১০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের ঘরে। যদিও কোম্পানিটি ফেব্রুয়ারিতে ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
এর আগে সর্বশেষ জুনের পূর্বাভাসে আয়ের অংক বাড়িয়েছিল মায়েরস্ক। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনে বিলম্বের হার বেড়ে চলা ও যানজটের কারণে পণ্যবাহী জাহাজের ভাড়া দ্রুত হারে বেড়েছে। সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে মায়েরস্ক বলেছে, আগে ধারণা করা হয়েছিল চলতি বছর বিশ্ব বাণিজ্যে ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কনটেইনার বাড়বে। কিন্তু নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি বাড়তে পারে ৪ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত, যা বিশ্ব বাণিজ্যের সম্প্রসারণ সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
ইয়েমেনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি গত বছরের শেষ দিকে লোহিত সাগরের বাব এল-মানদেব প্রণালিতে নিয়মিত হামলা শুরু করে। তাদের দাবি ছিল, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন জাহাজে আক্রমণ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাগরে মার্কিন বাহিনীর সশস্ত্র হস্তপেক্ষেও বাণিজ্য রুট স্বাভাবিক হয়নি। একে একে বড় কোম্পানিগুলো রুটটি এড়িয়ে চলার ঘোষণা দেয়। এর পরিবর্তে কনটেইনার শিপিং লাইনগুলো এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী পথ পাড়ি দিতে আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তের উত্তমাশা অন্তরীপকে বেছে নেয়, যা পণ্য পরিবহনের সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খরচও বাড়িয়ে তোলে।
মায়েরস্ক জানিয়েছে, তারা প্রাথমিকভাবে ভেবেছিল লোহিত সাগরের সমস্যা কয়েক মাস স্থায়ী হবে। কিন্তু এখন পূর্বাভাসে বলছে, চলতি বছরের বেশির ভাগ সময় এবং সম্ভবত ২০২৫ পর্যন্ত এ বাণিজ্য বাধা স্থায়ী হবে।
বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সাধারণত বড়দিনের পণ্য সরবরাহে কনটেইনার লাইনগুলো ব্যস্ত সময় পার করে। গত জুনে মায়েরস্কের প্রধান নির্বাহী ভিনসেন্ট ক্লার্ক জানিয়েছিলেন, সরবরাহ ঠিক সময়ে হবে কিনা এমন উদ্বেগের কারণে বড়দিন উপলক্ষে আমদানিকারকরা ক্রয়াদেশের সময় এগিয়ে আনতে পারেন, যা সরবরাহ চেইনে জট বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে মায়েরস্ক লোহিত সাগর সংকটের সম্ভাব্য সময়কাল সম্পর্কে অল্পই নতুন তথ্য দিয়েছে। কোম্পানিটি প্রথমে ভেবেছিল প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর ক্রয়াদেশ দেয়া বিপুলসংখ্যক নতুন জাহাজ সরবরাহ ও চাহিদার সম্পর্ককে ভারসাম্যহীন করে তুলবে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) মুনাফাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে এটুকুই বলছে যে, লোহিত সাগরের পরিস্থিতি কবে নাগাদ ঠিক হবে স্পষ্ট নয়। পরিস্থিতি অস্থির থাকায় বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সরবরাহ ও চাহিদা নিয়ে অস্পষ্টতা বিরাজ করছে।
কোম্পানিটি বলেছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় আয় প্রায় ২ শতাংশ কমে ১ হাজার ২৮০ কোটি ডলার হয়েছে। একই সময়ে পরিচালন মুনাফা ৪০ শতাংশ কমে ৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার হয়েছে।
এদিকে বছরের শেষ দিকের বৈশ্বিক বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন। কেননা তার দেয়া সম্ভাব্য শুল্ক বাধা চীন থেকে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এর আগেই চীন থেকে অতিরিক্ত পণ্যের ক্রয়াদেশ দিতে পারেন আমদানিকারকরা।
Source : এফটি
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন