পাকিস্তানের সৌর বিপ্লবঃ জনতার হাতেই বদলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানের সৌর বিপ্লবঃ জনতার হাতেই বদলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত

  • ০৩/০৫/২০২৫

২০২৪ সালে পাকিস্তান রেকর্ড ১৭ গিগাওয়াট সৌর প্যানেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের দ্বিগুণেরও বেশি। যা দেশটিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সৌর প্যানেল আমদানিকারকে পরিণত করেছে। দারিদ্র্য আর অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই আলো ঝলমলে হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। দেশটির বড় শহরগুলোর ছাদের ওপর আর গ্রামের বাড়িগুলোর আঙিনায় ঝলমল করছে নীল রঙের সৌর প্যানেল। ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের এ দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এক নীরব সৌর বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। তবে তা হয়েছে সরকারি নির্দেশ ছাড়াই, জনগণ নিজেরাই হাতে নিয়েছে এই রূপান্তরের হাল।
ক্লাইমেট থিংক ট্যাংক এম্বারের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে পাকিস্তান রেকর্ড ১৭ গিগাওয়াট সৌর প্যানেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের দ্বিগুণেরও বেশি। যা দেশটিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সৌর প্যানেল আমদানিকারকে পরিণত করেছে। আশ্চর্যের বিষয়, এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি বিশাল সৌর ফার্ম নয়, বরং দেশের সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত উদ্যোগ। বড় সরকারি নীতি বা প্রণোদনা ছাড়াই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাচ্ছে দেশটি। স্বাবলম্বী হচ্ছে সৌর বিদ্যুতে। অন্য কোনো দেশ এমন গতিতে কিংবা এত বড় পরিসরে এ খাতে অগ্রগতি পায়নি বলে জানিয়েছে এম্বার।
পাকিস্তানের সৌর বিপ্লবের পেছনে রয়েছে সংকট আর সুযোগের এক ধরনের ‘পারফেক্ট স্টর্ম’। চীনা সস্তা সৌর প্যানেলের সহজলভ্যতা, আকাশছোঁয়া বিদ্যুৎমূল্য আর অস্থির বিদ্যুৎ সরবরাহ জনগণকে সৌর বিদ্যুতে আগ্রহী করেছে। ১৯৯০ দশকের ব্যয়বহুল বিদ্যুৎচুক্তি, পাকিস্তানি রুপির মূল্যহ্রাস, আর ইউক্রেন যুদ্ধের পর গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে পাকিস্তানে বিদ্যুৎমূল্য গত তিন বছরে ১৫৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানে গত বছর প্রায় ১৫ গিগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে, যা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় অর্ধেক। গুগল আর্থে ইসলামাবাদ, করাচি বা লাহোরের ছবি স্ক্যান করলে দেখা যায়, ছাদগুলো প্রায় পুরোপুরি সৌর প্যানেলে ঢাকা। পাকিস্তানের এ পরিবর্তনটি প্রায় পুরোপুরি জনগণনির্ভর। বিশ্লেষকরা বলছেন, শূন্য শুল্ক ও নেট মিটারিং সিস্টেমের মতো সরকারি সুবিধা কিছুটা সাহায্য করেছে, কিন্তু মূল চালিকা শক্তি জনগণ।
তবে এ বিপ্লবের কিছু অন্ধকার দিকও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ‘ডেথ স্পাইরাল’ বা মৃত্যুচক্রের আশঙ্কা রয়েছে। সৌর বিদ্যুতে নির্ভরতা বাড়ায় গ্রিড থেকে আয় কমছে। এতে বিদ্যুৎ আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। ফলে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানও বেড়ে যাচ্ছে। যারা সৌর প্যানেল নেয়ার মতো সামর্থ্যবান নয় তারা থেকে যাচ্ছে সেই ব্যয়বহুল, অস্থির, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর গ্রিডে। ফলে সৌর প্রযুক্তি অর্থনৈতিকভাবে যৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পনা ছাড়া হওয়ায় এটি অসমতা ও বিদ্যুৎ খাতের অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে পাকিস্তান বর্তমানে দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শক্তি রূপান্তরের ‘পোস্টার চাইল্ড’ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এ উত্তপ্ত, পরিবর্তনশীল সময়ে পাকিস্তানের সৌর বিপ্লব শুধু আলো নয়, আশা ও সতর্ক বার্তাও বয়ে আনছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us