ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করাই টেলিগ্রামের প্রধান লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) পাভেল দুরভ। কোনো দেশ যদি এনক্রিপশনে ‘ব্যাকডোর’ রাখতে বাধ্য করে, তবে তারা ওই দেশের বাজার ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। খবর টেকরাডার। এনক্রিপশনে ব্যাকডোর বা গোপন প্রবেশদ্বারের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষ (যেমন সরকার বা অন্য কোনো সংস্থা) সহজে বা অনুমতি ছাড়াই নিরাপদ বা এনক্রিপ্টেড তথ্য পেতে পারে। ফলে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ এতে করে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদে থাকলেও, ব্যাকডোরের মাধ্যমে অন্যরা তা দেখতে বা ব্যবহার করতে পারে।
দুরভ গত সপ্তাহে নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে লেখেন, ‘অন্য অনেক সংস্থার মতো আমরা বাজার দখলের জন্য ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য বিক্রি করি না। প্রতিষ্ঠার পর ১২ বছরে টেলিগ্রাম একটি ব্যক্তিগত বার্তাও প্রকাশ করেনি।’ প্রতিবেদন বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গোপন বার্তায় আইনি প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই টেলিগ্রাম এ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফ্রান্স সম্প্রতি একটি বিতর্কিত বিল বাতিল করেছে, যেখানে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ও ই-মেইল সেবাদাতাদের ব্যাকডোর তৈরির কথা বলা হয়েছিল। দুরভ বলেন, ‘একবার এনক্রিপশনে ব্যাকডোর তৈরি হলে তা শুধু পুলিশের জন্যই নয়, বরং বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও হ্যাকারদের জন্যও উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ফলে ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা থাকবে না।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিরাপত্তা কৌশল ‘প্রটেক্টইউ’ নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ কৌশলের প্রধান উদ্দেশ্য এনক্রিপ্টেড ডাটায় আইনি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিরাপদ এনক্রিপশন দুর্বল না করে ব্যাকডোর তৈরি করা কারিগরিভাবে অসম্ভব। টেলিগ্রাম ছাড়াও সিগন্যাল ও অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপও এ ধরনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। আগামী বছরের মার্চ থেকে ইউরোপের কয়েকটি দেশ সিগন্যাল, হোয়াটসঅ্যাপ ও আইমেসেজের মতো অ্যাপে ব্যাকডোর বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে। ফ্রান্সে পাভেল দুরভকে গত বছর গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অপরাধীদের এনক্রিপ্টেড সেবা সরবরাহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। মামলাটি এখনো চলছে। এদিকে যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে অ্যাপলকে তাদের আইক্লাউডের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডেও নজরদারি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা এনক্রিপশন ও অনলাইন পরিচয় গোপন রাখার নীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এমন পরিস্থিতিতে টেলিগ্রাম জানিয়েছে, ব্যাকডোর চাপিয়ে দেয়া হলে তারা অ্যাপের কার্যক্রম বন্ধ করতেও দ্বিধা করবে না। দুরভের মতে, গোপনীয়তা বিক্রি না করে বাজার ছেড়ে যাওয়াই হবে তাদের জন্য সম্মানজনক পথ।
মন্তব্য করুন