ইউরেনিয়াম উৎপাদন বন্ধ করে আমদানি করার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইরানের – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ০৮ Jul ২০২৫, ০৬:২৬ অপরাহ্ন

ইউরেনিয়াম উৎপাদন বন্ধ করে আমদানি করার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইরানের

  • ২৬/০৪/২০২৫

তবে রুবিও সম্প্রতি ‘দ্য ফ্রি প্রেস’ পডকাস্টে বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশের মতোই ইরান চাইলে বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে পারে।’

নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের অধিকার রাখার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছে ইরান। ওমানে শনিবার অনুষ্ঠিত আলোচনার তৃতীয় দফায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নেতৃত্বাধীন দলের দাবি ছিল, ইরান যেন কেবল আমদানিকৃত পারমাণবিক জ্বালানির ওপর নির্ভর করে। তবে তেহরান এই প্রস্তাব স্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ বন্ধ করা এবং এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা ই এই আলোচনার লক্ষ্য। এই অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনড় থাকলে চলমান আলোচনাটি একটি বড় জটিলতায় পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রুবিওর প্রস্তাবটি মূলত মার্কিন প্রশাসনের দুইটি ভিন্ন মতের মধ্যে একটি আপসের চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। এক পক্ষ বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলাই একমাত্র উপায়। আরেক পক্ষ বলছে, কঠোর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় ইরানকে স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এই প্রস্তাবটি অনেকটা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির মতোই, যেখান থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের মতে, তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করতেই হবে। তবে রুবিও সম্প্রতি ‘দ্য ফ্রি প্রেস’ পডকাস্টে বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশের মতোই ইরান চাইলে বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে পারে।’

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে তেহরানকে অবশ্যই ‘আমদানিকৃত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম’ ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে ইরানের প্রধান আলোচক আব্বাস আরাঘচি চীনে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র দাবি যদি হয় যে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না, তবে এটি একটি বাস্তবসম্মত দাবি। কিন্তু যদি তারা অবাস্তব ও অযৌক্তিক দাবি তোলে, তাহলে সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক।’ কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অনুষ্ঠানে এই সপ্তাহে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে আরাঘচি বলেন, ‘ইরানের সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে আচরণ করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির স্বাক্ষরকারী হিসেবে আমাদের অধিকার (যেমন, নিজেদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষমতা)। আমাদের বৈশ্বিক নিরস্ত্রীকরণ কাঠামোর মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা চলবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের গোপন করার কিছু নেই। এজন্যই ২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে ‘কঠোর পর্যবেক্ষণ’ ব্যবস্থায় সম্মত হয়েছিলাম।’ আরাঘচি জানান, ইরানের দীর্ঘমেয়াদে অন্তত ১৯টি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে, যার মাধ্যমে ‘দশ হাজার কোটি ডলারের সম্ভাব্য চুক্তি’ হতে পারে। শুধু এই একটি কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের স্থবির হয়ে পড়া পারমাণবিক শিল্পে নতুন প্রাণ ফিরবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে এক বক্তব্যে সিআইএর সাবেক পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না, ইরানের বর্তমান সরকার দেশীয় সমৃদ্ধিকরণ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে রাজি হবে। আগের করা চুক্তিতেও এটা ৫ শতাংশের নিচে সীমাবদ্ধ ছিল, যা বেসামরিক কর্মসূচির জন্য যথেষ্ট, অস্ত্র তৈরির জন্য নয়। তবে এটাই হবে আলোচনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি।’

ফাউন্ডেশন ফর দ্য ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসি-এর সহযোগী গবেষক আন্দ্রেয়া স্ট্রিকার বলেন, ‘এখন একটি বড় ঝুঁকি হলো, ট্রাম্পকে এমন একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে যা ইরানের পারমাণবিক হামলার সক্ষমতাকে অক্ষত রেখেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বোমা তৈরির পথ খোলা রাখবে।’ তিনি আরও জানান, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইরানের কেবল একটি গোপন স্থানে কয়েকশ উন্নত সেন্ট্রিফিউজ থাকলেই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তাদের বর্তমান ইউরেনিয়াম মজুদের পর্যায়ে পুনরায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। স্ট্রিকার আরও বলেন, ‘কংগ্রেস ইতোমধ্যেই এই ইস্যুতে সক্রিয় হয়ে ওঠায় ট্রাম্পের জন্য এমন একটি দুর্বল চুক্তিকে পাশ করানো কঠিন হবে।’

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us