ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট (ডিএমএ) আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের দুই টেক জায়ান্ট অ্যাপল ও মেটাকে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। খবর রয়টার্স।
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে গত বুধবার ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ডিজিটাল আইন লঙ্ঘনের দায়ে আইফোন নির্মাতা অ্যাপলকে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ও ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটাকে ২০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। ২০২২ সালে পাস হওয়া এ আইনে বলা আছে, বড় কোম্পানিগুলোকে নিজেদের প্লাটফর্মে অন্য প্রতিযোগীদের সেবা বা অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে, যেন তারা একা আধিপত্য গড়ে তুলতে না পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইইউ এ আইনের আওতায় প্রথমবার বড় প্রযুক্তি কোম্পানিকে জরিমানা করল। আইন লঙ্ঘনের কারণে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের সমপরিমাণ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যাপ স্টোরের বাইরে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী দামে অ্যাপ কিনতে বাধা দেয়ার অভিযোগে এ জরিমানা করা হয়েছে অ্যাপলকে। আইফোনের জন্য যখন অ্যাপ তৈরি করা হয়, তখন অ্যাপল ডেভেলপারদের বাধ্য করা হয় সেটি শুধু তাদের অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে বিক্রি করতে ও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে। ইইউ বলছে, এ বাধা বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ করে এবং দামের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই সংস্থাটির দাবি, অ্যাপলকে আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা দিতে হবে এবং ব্যবহারকারীকে অ্যাপ স্টোরের বাইরে সস্তায় অ্যাপ কেনার সুযোগ দিতে হবে।
মেটাকেও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, কোম্পানিটি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের ব্যবহারকারীদের বাধ্য করেছিল ‘বিজ্ঞাপন দেখবেন’ না হলে ‘অর্থ দিয়ে বিজ্ঞাপন এড়াবেন’, এমন একক বিকল্প বেছে নিতে। সংস্থাটির মতে, এমন ব্যবস্থা গোপনীয়তা ও তথ্য সংরক্ষণের নিয়ম লঙ্ঘন করে, কারণ কোম্পানিটি ব্যবহারকারীদের স্বাধীনভাবে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার সুযোগ দিচ্ছে না। এদিকে জরিমানার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজ ‘অর্থনৈতিক চাপের নতুন কৌশল’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এক বিবৃতিতে কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ মার্কিন সরকার মেনে নেবে না। দি ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই কোম্পানিকে করা এ জরিমানা যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ করতে পারে এবং দেশটির সরকার ও ইইউর মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে। ইইউর তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় কমিশন এক বছরের তদন্ত শেষে এ জরিমানা আরোপ করেছে। সংস্থাটির অভিযোগ, অ্যাপল ও মেটা ইইউর আইন মানেনি, যা বাজারে ছোট কোম্পানিদের সুযোগ দিতে তৈরি করা হয়েছিল।
ইউরোপীয় কমিশনের ক্লিন, জাস্টিস অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ট্রানজিশন বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট টেরিজা রিবেরা বলেছেন, ‘ইইউতে কার্যক্রম চালানো সব কোম্পানিকে অবশ্যই তাদের আইন মেনে চলতে হবে ও ইউরোপীয় মূল্যবোধকে সম্মান করতে হবে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, জোটটি ইচ্ছাকৃতভাবে আমেরিকার কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইইউর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে অ্যাপল। কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে দাবি করে, ইউরোপীয় কমিশন একের পর এক সিদ্ধান্ত দিয়ে অ্যাপলকে ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্তা করছে। ইইউর নিয়ম অ্যাপলের সেবার মান কমিয়ে দিচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া মেটাও বলছে, ইইউর জরিমানা পক্ষপাতদুষ্ট। জরিমানার বিরুদ্ধে দুটি কোম্পানি আপিল করার কথা জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন