বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে কাটছাঁট আইএমএফের – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৫:২২ পূর্বাহ্ন

বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে কাটছাঁট আইএমএফের

  • ২৪/০৪/২০২৫

পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। নতুন করে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আট দশক ধরে চলে আসা ব্যবস্থা। এর মধ্যেই বৈশ্বিক বাণিজ্যকে চাপে ফেলে দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা এখন ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি আরো শ্লথ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগে করা পূর্বাভাস সংশোধন করে কমিয়ে এনেছে সংস্থাটি। খবর এপি ও রয়টার্স।

আইএমএফের মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউলুক’ অনুযায়ী, বৈশ্বিক অর্থনীতি চলতি বছর ২ দশমিক ৮ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে, যা জানুয়ারিতে দেয়া ৩ দশমিক ৩ শতাংশ পূর্বাভাস থেকে কম। এছাড়া ২০২৬ সালের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৩ থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে ৩ শতাংশে। আইএমএফ বলছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত শুল্ক এবং এতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে মার্কিন ও বৈশ্বিক অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে পড়বে। চলতি বছর ১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে, আগের পূর্বাভাসে ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ হার ২০২৪ সালের তুলনায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। এছাড়া মন্দাসংক্রান্ত আশঙ্কা ২৫ থেকে বেড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ হয়েছে।

চীনে চলতি ও আগামী বছর ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, যা সংশোধন-পূর্ব পূর্বাভাসের তুলনায় প্রায় দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। পূর্বাভাস সংশোধন প্রসঙ্গে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ের গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘আমরা নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি। ৮০ বছর ধরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল তা এখন পুনর্গঠিত হচ্ছে।’

শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশই প্রভাবিত হয়েছে। এখন গড় শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং এক শতকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আইএমএফের পূর্বাভাস অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। জেপি মরগান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা এখন ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভের পূর্বাভাস অনুসারে, দেশটির প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসবে। গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘‌আমদানি শুল্ক ঘিরে বেড়ে ওঠা অনিশ্চয়তার কারণে আইএমএফ ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির একাধিক সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করেছে। ৪ এপ্রিল এ পূর্বাভাস চূড়ান্ত করা হয়। ওই সময় ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় ৬০টি দেশের ওপর রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এবং সর্বজনীনভাবে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বসায়।’

৯ এপ্রিল ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘স্থগিতাদেশ পূর্বাভাসে তেমন পরিবর্তন আনেনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এরই মধ্যে পরস্পরের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে।’ গৌরিঞ্চাস ব্লগ পোস্টে সতর্ক করেন এভাবে, বিশ্ব বাণিজ্যের বেশির ভাগই চূড়ান্ত পণ্য নয়, বরং কোনো পণ্য তৈরির জন্য ব্যবহৃত ছোট ছোট যন্ত্রাংশ বা কাঁচামাল। যখন এ ধরনের পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো হয়, তখন পুরো উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। সরবরাহ চেইনে এমন বিঘ্ন দেখা গিয়েছিল কভিড মহামারীকালে। ফলে যেসব কোম্পানি অনিশ্চিত বাজারে প্রবেশ করছে, তারা স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ বন্ধ এবং খরচ কমিয়ে দিতে পারে বলে মন্তব্য এ অর্থনীতিবিদের।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কম উন্নত দেশগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলবে। আগে ১ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও আইএমএফ বলছে, মেক্সিকোর অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, তা এখন ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে চীনে খুব একটা পরিবর্তন হবে না। আইএমএফের ভাষ্যে, শুল্কের প্রভাবে চীনা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি অতিরিক্ত ব্যয় অনেকটা ক্ষতি পুষিয়ে দেবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবৃদ্ধি ধীর হবে, কিন্তু চীনের তুলনায় শুল্ক কম হওয়ায় ক্ষতিও তুলনামূলক ছোট হবে। জার্মান সরকারও ব্যয় বাড়িয়ে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেবে। ইউরোজোনের ২৭টি দেশের অর্থনীতি এ বছর দশমিক ৮ এবং আগামী বছর ১ দশমিক ২ শতাংশ সম্প্রসারণ হতে পারে, যা জানুয়ারির পূর্বাভাস থেকে দশমিক ২ শতাংশ কম। জাপানের প্রবৃদ্ধি এ বছর ও আগামী বছর হবে দশমিক ৬ শতাংশ, যা জানুয়ারির পূর্বাভাস থেকে যথাক্রমে দশমিক ৫ ও দশমিক ২ শতাংশ কম।

আলাদা প্রতিবেদনে মঙ্গলবার আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, আর্থিক বাজারে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। শুল্কনীতির ফলে বাজারে পতন সত্ত্বেও কিছু শেয়ার ও বন্ডের দর এখনো উচ্চে, এগুলো আরো পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান চাপের মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে উচ্চ ঋণগ্রস্ত হেজ ফান্ড ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বিক্রি করে নগদ তুলতে বাধ্য হতে পারে। আইএমএফ এমন সময় প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস সংশোধন করল যখন শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের নেতারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট মঙ্গলবার জানান, বেশ গতিশীল আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া চীনের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখা যায়। এদিন ট্রাম্প বলেন, ‘‌চীনের সঙ্গে চুক্তি হলে এত উচ্চ হারে শুল্ক থাকবে না। বর্তমান হারের কাছাকাছি থাকবে না, কিন্তু শূন্যও হবে না।’

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us