২০২১ সালে ব্লু অরিজিন তাদের বেসামরিক মহাকাশযাত্রা কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে এই পর্যন্ত ৫৮ জন যাত্রী নিউ শেপার্ডের মাধ্যমে মহাকাশে গেছেন।
মার্কিন ধনকুবের অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসের প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন-এর বানানো রকেটে মহাকাশে ঘুরে এলেন পপ গায়িকা কেটি পেরিসহ ছয় প্রভাবশালী নারী। দলে কেটি ছাড়াও ছিলেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘সিবিএস মর্নিং’-এর সঞ্চালক গেইল কিং, বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ়, নাসার বিজ্ঞানী আয়েশা বোয়ে, মানবাধিকার কর্মী আমান্ডা নুয়েন এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান ফ্লিন। ব্লু অরিজিনের রকেটে ভর করে তারা পৌঁছে যান মহাকাশের কিনারায়—যেখানে ভরশূন্যতা শুধু অনুভবই নয়, বাস্তব। এই ঐতিহাসিক অভিযানে ৬০ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ছয় নারী মহাকাশে পা রাখলেন।
স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে রকেট ‘নিউ শেপার্ড’ উৎক্ষেপণ করা হয়। প্রায় ১০০ কিলোমিটার উপরে গিয়ে এটি পৌঁছে মহাকাশের প্রান্তে। কয়েক মিনিটের জন্য মহাকাশের ভরশূন্য অবস্থায় যাত্রীদের ভাসমান অভিজ্ঞতা দিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। পুরো যাত্রাটি ছিল প্রায় ১১ মিনিটের। পৃথিবীতে ফিরে কেটি পেরি বললেন, ‘ভালোবাসার সঙ্গে নিজেকে গভীরভাবে সংযুক্ত মনে হচ্ছে।’ কেটি মহাকাশে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন একটি ‘ডেইজি’ ফুল। তার মেয়ের নামও ডেইজি। মেয়েকে স্মরণে রাখতেই এই বিশেষ ফুল সঙ্গে রেখেছিলেন তিনি। ২০২১ সালে ব্লু অরিজিন তাদের বেসামরিক মহাকাশযাত্রা কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে এই পর্যন্ত ৫৮ জন যাত্রী নিউ শেপার্ডের মাধ্যমে মহাকাশে গেছেন।
কে ব্লু অরিজিনে মহাকাশে যেতে পারেন?
পকেট ভারি থাকলে যে কেউ-ই ব্লু অরিজিনের ফ্লাইটে মহাকাশ ভ্রমণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কোম্পানির ওয়েবসাইটে একটি রিজার্ভেশন পেইজ আছে, যেখানে আবেদনকারীকে তাদের নাম, ঠিকানা, জন্ম সালসহ কিছু প্রাথমিক তথ্য দিতে হয়। সেখানে একটি অংশে ৫০০ শব্দের মধ্যে নিজেকে বর্ণনা করতেও বলা হয়। শর্ত একটাই— আবেদনকারীর বয়স অন্তত ১৮ বছর হতে হবে।
খরচ কত?
ব্লু অরিজিন তাদের প্রতিটি যাত্রার খরচ সরাসরি প্রকাশ করে না। তবে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে প্রথমে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার জমা রাখতে হবে, যা ‘সম্পূর্ণ ফেরতযোগ্য’। ২০২১ সালে প্রথম ক্রু ফ্লাইটের সময় একটি আসন নিলামে বিক্রি হয়েছিল ২৮ মিলিয়ন ডলারে। ব্লু অরিজিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভার্জিন গ্যালাকটিক সাধারণ যাত্রার জন্য ২ থেকে সাড়ে ৪ লাখ ডলারের টিকিট বিক্রি করছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
সবাইকে কি টাকা দেয়া লাগে?
না, সবাইকে কোটি কোটি ডলার খরচ করতে হয় না মহাকাশে যাওয়ার জন্য। অনেক তারকা ‘অতিথি’ হিসেবে ব্লু অরিজিনের যাত্রায় অংশ নিয়ে থাকেন। যেমন ‘স্টার ট্রেক’-খ্যাত অভিনেতা উইলিয়াম শ্যাটনার ও টেলিভিশন উপস্থাপক মাইকেল স্ট্রাহান বিনামূল্যে মহাকাশে গিয়েছিলেন। স্পেস ভিআইপি নামের মহাকাশভ্রমণ বুকিং কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা রোমান চিপোরুখা এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘এটা শুধু টাকার বিষয় নয়, আপনি কে, আপনার সামাজিক অবস্থান কী, আপনি তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ— এসবের ওপর নির্ভর করে।’
এপ্রিল ১৪-এর ফ্লাইটেও ‘কিছু যাত্রী’ বিনামূল্যে গেছেন বলে জানিয়েছে সিএনএন। যদিও কারা অর্থ দিয়েছেন আর কারা দেননি, তা প্রকাশ করেনি ব্লু অরিজিন। তবে ব্লু অরিজিন দাবি করছে, তাদের লক্ষ্য মহাকাশে যাওয়ার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা। রকেট পুনঃব্যবহারযোগ্য হওয়ায় ভবিষ্যতে এটি আরও সাশ্রয়ী হবে বলেই আশা করছে সংস্থাটি। ওয়ারউইক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক লইজোস হেরাক্লিয়াসের মতে, নিউ শেপার্ডের প্রতি উৎক্ষেপণে খরচ পড়ে ১০ থেকে ৩০ লাখ ডলারের মধ্যে। অর্থাৎ, প্রতিটি যাত্রী থেকে যদি ৫ লাখ ডলারের মতো পাওয়া না যায়, তাহলে এই ব্যবসা আর্থিকভাবে টেকসই হবে না।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন