রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ নামে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের উপর যে পাল্টা ও বাড়তি শুল্ক বসিয়ে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখান থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন। বাংলাদেশসহ সব দেশের ওপর এই শুল্কের প্রয়োগ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন তিনি। তবে চীনের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের উপর আরোপিত শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যেক দেশকে ন্যুনতম ১০ শতাংশ শুল্ক দিতেই হবে। বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে নিজেই বাড়তি পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করার এ তথ্য জানিয়েছে ট্রাম্প। এতে তিনি লিখেছেন, ৯০ দিনের জন্য পালটা শুল্ক স্থগিত করেছি। এই সময়ে ১০ শতাংশ পালটা শুল্ক কার্যকর থাকবে। বাংলাদেশী পণ্যে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন শুল্ক প্রত্যাহার করায় আমাদের পণ্য রপ্তানিকারকদেরকে এ হারেই শুল্ক পরিশোধ করে যেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহারের খবরে বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে সূচকের বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। এর আগে এই শুল্ক আরোপের ঘটনায় এসব বাজারে নজিরবিহীন দরপতন হয়েছিল। এদিকে বাংলাদেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার দিবাগত রাতে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রধান উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘শুল্ক কার্যকর ৯০ দিন স্থগিত করার আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সহায়তা করতে আমরা আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখব।’ ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ট্রাম্প অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের সমস্ত দেশকে জানিয়েছিলাম—পালটা ব্যবস্থা না নিলে তোমরা পুরস্কৃত হবে। সুতরাং, যারা আলোচনায় আসতে চায়, আমরা তাদের কথা শুনতে প্রস্তুত। বেসেন্ট বলেন, এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যকে গুরুত্ব দেন এবং আমরা সৎভাবে আলোচনা করতে চাই। বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, ট্রাম্প যখন ট্রুথ সোশ্যাল-এ এই বার্তাটি লিখছিলেন, তখন তিনি এবং বেসেন্ট তার সঙ্গে ছিলেন। লুটনিক বলেন, স্কট বেসেন্ট এবং আমি প্রেসিডেন্টের পাশে বসে ছিলাম, যখন তিনি তার প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ট্রুথ পোস্টটি লেখেন। বিশ্ব এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, কিন্তু চীন ঠিক উল্টো পথে হাঁটছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে রীতিমতো উল্লাস দেখা যায় বলে জানিয়েছে সিএনএন। ডাউ সূচক এক লাফে ২,২০০ পয়েন্ট বা ৫.৯% বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৬.৫% এবং নাসডাক সূচক ৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। গত সপ্তাহে ট্রাম্প যে উচ্চ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, তা বাজারে ধস নামিয়েছিল। উল্লেখ্য, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পালটা শুল্প আরোপের এই ক্যাম্পেইনে নিশানায় ছিল বাংলাদেশও। ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই ঘোষণার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এক চিঠিতে তিন মাসের জন্য এই বাড়তি শুল্প আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিতের অনুরোধ করেছিলেন ট্রাম্পকে। শেষ পর্যন্ত সে পথেই হেঁটেছেন ট্রাম্প।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন